দেবদাস লক্ষ্মণ। —নিজস্ব চিত্র।
ভারতের চন্দ্রাভিযানের মতোই বাধা টপকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন বাঁকুড়া জেলার কেঞ্জাকুড়া গ্রামের দেবদাস লক্ষ্মণ। তন্তুবায় পরিবারের এই সন্তান অনটনের সঙ্গে লড়াই করেই পৌঁছেছেন ইসরোয়। তিনিও চন্দ্রযান ৩ অভিযানের একজন সফল যোদ্ধা।
ইসরোর বেঙ্গালুরুতে ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত দেবদাস জানান, যে অ্যান্টেনার মাধ্যমে ইসরো চন্দ্রযানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, তার তাপ নিয়ন্ত্রক দলে রয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের এই ঐতিহাসিক অভিযানের একটি অংশ হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’’
তাঁর স্ত্রী সূপর্ণা বলেন, ‘‘ইসরোর এই অভিযানে বিভিন্ন দফতর বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছে। দেবদাস সেখানে তাপ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন।’’
তবে সহজ ছিল না দেবদাসের কেঞ্জাকুড়া থেকে ইসরো-যাত্রা। ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন বাবা শ্যামসুন্দর লক্ষ্মণের তাঁত থেকে আয় কমছে। অভাব অনটনকে সঙ্গী করেই কেঞ্জাকুড়া মোলবোনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এরপরে কলকাতার একটি পলিটেকনিক কলেজ থেকে মেকানিক্যাল বিভাগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করেন। তারপরে কল্যাণী গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে বিটেক করেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, তখন থেকেই তাঁর ইসরোয় যোগদানের ইচ্ছা তৈরি হয়।প্রথমবারের পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও ২০১৯ সালে ইসরোতে ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগদানের সুযোগ পান তিনি।
দেবদাস বলেন, ‘‘আমি একজন সাধারণ ছাত্র ছিলাম। তবে ভাল কিছু করার লক্ষ্য ছিল ছোট থেকেই। ক্রমশ উত্তরণ হয়েছে আমার। অদম্য জেদ আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবকিছুই করা যায়। আমার সাফল্যের পিছনে সব থেকে বড় অবদান বাবা-মায়ের আত্মত্যাগ। পরিবারের সবাই এবং সমস্ত স্তরের শিক্ষকদের কাছেও কৃতজ্ঞ।’’
কেঞ্জাকুড়া মোলবোনা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমানাথ কাইতি বলেন, ‘‘দেবদাস খুবই মেধাবী ও বিনয়ী। ওর জন্য আমরা গর্বিত।’’
গ্রামের ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিতে দেবদাস বলেন, ‘‘গ্রামের ছেলেমেয়েদের বুঝতে হবে তাদের রসদ, অর্থ সব কম। একমাত্র শিক্ষাই তাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। সফল করবে।’’