ব্রাত্য বসু
একাধিক স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নেই। বেশ কিছু দিন ধরেই পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লক থেকে এমন অভিযোগ উঠছিল। সম্প্রতি শিক্ষকদের সেই অভাব ঘোচাতে ব্যবস্থা নেয় সরকার। বাঘমুন্ডির বিভিন্ন হাই স্কুলে অন্যান্য স্কুল থেকে পাঠানো হয় ১০ জন শিক্ষককে। যাঁদের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলের কয়েক জন শিক্ষকও রয়েছেন। এর পরেই বিতর্ক তৈরি হয়। প্রশ্ন ওঠে, প্রাথমিক স্কুলে পড়ানোর অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা নিয়ে কী করে এক জন শিক্ষক হাই স্কুলে পড়াবেন! সোমবার এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, যোগ্যতা দেখেই কয়েকজন শিক্ষককে সাময়িক ভাবে ওই সব স্কুলে পাঠানো হয়েছে। পরে তাঁদের আবার নিজেদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা হবে।
রবিবার পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা জানিয়েছিলেন, বাঘমুন্ডির বিভিন্ন হাই স্কুলে ১০ জনকে অন্যান্য স্কুল থেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রাথমিক স্কুল, জুনিয়র হাই স্কুলের কয়েক জনও রয়েছেন। জেলাশাসক জানান, শিক্ষা দফতর এ ব্যাপারে গত ২ জুলাই একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। তিনি বলেন, ‘‘বাঘমুন্ডি ব্লকের ৬টি স্কুলে ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব দূর করতেই ১০ জনকে বাঘমুন্ডির ওই ৬টি স্কুলে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জুনিয়র হাই স্কুল ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকও রয়েছেন।’’ জেলাশাসক এ-ও জানান, ওই শিক্ষকদের সকলেই ভবিষ্যতে ওই সব স্কুলে থেকে যাবেন। তিনি ‘বদলি’ শব্দটাও ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ।
এর পরেই প্রশ্ন উঠতে থাকে, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষককে কিসের ভিত্তিতে হাই স্কুলে ‘বদলি’ করা হল? তাঁদের কি হাই স্কুলে পড়ানোর যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা রয়েছে? ঘটনাচক্রে সোমবার শিক্ষক ঘাটতির প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টার বাঘমুন্ডি বন্ধ ডেকেছিল কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো ফেসবুকে এ প্রসঙ্গে পোস্টও করেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘কোন নিয়মে প্রাথমিকের শিক্ষককে হাই স্কুলে পাঠানো হল, তা উল্লেখ করে প্রশাসনের কাছে নির্দেশিকা প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।’ পুরুলিয়ার বিজেপি সভাপতি বিবেক রাঙাও এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ যদি না হয়, আর হলেও তাতে যদি দুর্নীতি হয়, তা হলে তো এই অবস্থাই হবে।’’
যদিও পরে জেলাশাসক তাঁর রবিবারের বয়ান থেকে কিছুটা সরে আসেন। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক হলেও ওঁদের যোগ্যতা রয়েছে। তাঁদের তো বদলি করা হয়নি। ডেপুটেশনের ভিত্তিতে হাই স্কুলে পাঠানো হয়েছে।’’ এ বিষয়ে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) গৌতম চন্দ মালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও।
এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে। ব্রাত্য জানান, এটা আপৎকালীন নির্দেশ। স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নয়। তিনি বলেন, ‘‘কিছু মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষককে সাময়িক ভাবে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হলেই তাঁরা আবার নিজেদের স্কুলের দায়িত্বে ফেরত যাবেন।’’