Death

ক্ষেত বাঁচাতে গিয়ে হাতির হানায় নিহত

হাতির ভয়ে বড় রাস্তা দিয়ে সোনামুখী যেতেও ভয় পাচ্ছেন গ্রামের লোকজন। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সোনামুখী শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৫৮
Share:

তছনছ: মিলন কারকের (ইনসেটে) গোপালভোগ ধানের খেত। এখানেই তাঁকে থেঁতলে মারে হাতি। ছবি: শুভ্র মিত্র

জমির ধান বাঁচাতে গি য়ে হাতির হানায় মৃত্যু হল এক যুবকের। মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়ার সোনামুখী রেঞ্জের কোচডিহি গ্রামের ঘটনা। নিহতের নাম মিলন কারক (২৫)। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (‌সেন্ট্রাল সার্কল) এস কুলানদাইভেল বলেন, ‘‘সোনামুখীতে হাতির হানায় এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের পরিবার চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন, সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো পরিবারের এক জন চাকরিও পাবেন।’’ তবে ঘটনায় বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় মানুষজন।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শী লক্ষ্মণ ঘোষ জানান, রাত তখন প্রায় ১১টা। খবর আসে, হাতির পাল নেমেছে। কোচডিহি গ্রাম থেকে দু’কিলোমিটার দূরে, জঙ্গলের ধারে ভুলা মৌজার ধানের জমিতে দাপাচ্ছে। গ্রামের বেশ কয়েকজন ফসল বাঁচাতে গিয়েছিলেন। যে যার জমিতে ছড়িয়ে পড়েন। মিলন কিছুটা দূরে ছিলেন। লক্ষ্মণবাবু বলেন, ‘‘চোখের সামনে হাতি থেঁতলে দিল মিলনকে। তেল নেই, হুলা নেই, বন দফতরের কোনও লোকজনও ছিল না। বন্ধুকে বাঁচাতে পারলাম না।’’ তিনি জানান, দশ মিনিট পরে, হাতি সরলে জমি থেকে মিলনের দেহ উদ্ধার হয়।

ভিলেজ পুলিশ মারফত খবর যায় থানায়। রাতেই দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায় পুলিশ। মিলনের বন্ধু তারক নন্দী বলেন, ‘‘৪৩ টাকা প্রতি কেজি গোপালভোগ ধান। হাতির হানা থেকে বাঁচাতে গিয়ে মিলন নিজের প্রাণটাই দিয়ে দিল। এখন ভয়ে কেউ জমি বাঁচাতে যাচ্ছে না। পটল, ঝিঙে— সব হাতি সাবাড় করছে।’’ হাতির ভয়ে বড় রাস্তা দিয়ে সোনামুখী যেতেও ভয় পাচ্ছেন গ্রামের লোকজন।

Advertisement

সোনামুখীর সিপিএম বিধায়ক অজিত রায় বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে সোনামুখী থেকে ইছারিয়া ফেরার পথে আমি নিজেই হাতির দলের সামনে পড়ে গিয়েছিলাম। কোনও রকমে বেঁচেছি।’’ ‘হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সংগ্রামী গণমঞ্চ’-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফসল ভরা মাঠ ও প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত জেলার বাইরে হাতির দল সরানোর ব্যবস্থা করুক বন দফতর।’’ বুধবার মিলনদের বাড়িতে গিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য কদম লোহার।

এ দিকে, বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ বন দফতরের সোনামুখী রেঞ্জ অফিসে গিয়ে দেখা গেল, তালা ঝুলছে। চত্বর পুলিশে ছয়লাপ। সোনামুখীর বন আধিকারিক ফোন ধরেননি। জবাব মেলেনি মেসেজেরও। মুখ্য বনপাল (‌সেন্ট্রাল সার্কল) বলেন, ‘‘বন সহায়ক পদে নিয়োগ সংক্রান্ত কাজে রেঞ্জ অফিসার বাঁকুড়ায় গিয়েছেন।’’

বুধবার সকালে কোচডিহি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মিলনের মা ঝর্না কারক ও বাবা দিলীপ কারক ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের থেকে জানা যায়, দুই বিঘা জমিতে গোপালভোগ ধান লাগিয়েছিল পরিবারটি। ধানের কাঠি গোল হতে শুরু করেছিল। মিলন সচরাচর হাতি তাড়াতে যেতেন না। মঙ্গলবার তাঁরা নিষেধ করলেও হাতি এসেছে শুনে ছুটে যান।

মিলনদের বাড়িতে ছিল পড়শিদের ভিড়। খবর পেয়ে বাপের বাড়ি এসেছেন দিদি অপর্ণা বারিক। জানান, ছোট ভাই সেনাবাহিনীতে চাকরি নিয়ে বাইরে রয়েছেন বছর দু’য়েক। বাবা-মার দেখাশোনা করতেন মিলন। কিছু দিন আগে ট্রাক্টর কিনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। পড়শি অরূপ চৌধুরী ও প্রদীপ ঘটক বলেন, ‘‘কারও বিপদে সবার আগে ছুটে যেত ছেলেটা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement