পথে: জাতীয় সড়ক ধরে ঝাড়খণ্ডের দেওঘর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পথে হাঁটছেন শ্রমিকেরা। শনিবার সিউড়ির কাছে। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যায়। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘূর্ণিঝড় আমপানে তছনছ হয়েছে তাঁদের বাড়িঘর। সেই খবর পেয়েই দেওঘর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাড়ির পথে হেঁটে রওনা দিয়েছিলেন ১২ জন পরিযায়ী শ্রমিক। শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সিউড়ি শহরের নতুনপল্লির কাছে, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে তাঁদের উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করল পুলিশ।
আমপানে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ কয়েকটি জেলা। শ্রমিকদের থেকে জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে জনা সাতেক পাথরপ্রতিমা থানা এলাকার বাসিন্দা। বাকিদের বাড়ি ঢোলাহাট ও কাকদ্বীপ থানা এলাকায়। মাস ছ’য়েক আগে বিহারের বৈদ্যনাথপুরে একটি রাইসমিলে কুলির কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন। যেহেতু রাইসমিল লকডাউনের আওতার বাইরে ছিল, তাই তাঁরা এত দিন সেখানে নিয়মিত কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। লকডাউন ওঠার পরে বাড়ি ফিরবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু, আমপানে সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। দুর্যোগে পরিবারের পাশে থাকতে হেঁটেই রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে।
শ্রমিকদের মধ্যে মনোজ বাগ বলেন, ‘‘বাড়িতে মা, বাবা, ভাই, বোন আছে। ঝড়ের পরে একবার কথা হয়েছিল। ওরা বলেছিল, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে।’’ শ্রমিক বীরেন বরের কথায়, ‘‘বাড়িতে স্ত্রী আর ১০ বছরের মেয়ে। পেটের দায়ে কাজ করতে এসেছি। ঝড়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। শুনলাম, বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে। আমি আর থাকতে পারলাম না। হাঁটাপথেই রওনা হলাম।’’ শ্রমিকেরা জানান, তাঁরা প্রথমে হেঁটে কিছুটা রাস্তা আসেন। তার পরে লরিতে করে বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমানায় পৌঁছন। সেখান থেকে আবারও হাঁটা। এ দিন সিউড়িতে জাতীয় সড়কের ধারে একটি গাছের তলায় তাঁদের ক্লান্ত-অবসন্ন অবস্থায় বসে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েক জন শ্রমিকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন। পরে পুলিশ এসে তাঁদেরকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যায়। একটু সুস্থ হওয়ার পরে ওই শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাস।