দুর্ঘটনায় ভাঙা মুখের হাড় জোড়া লাগল জেলাতেই

সিউড়ি বারুইপাড়ার বাসিন্দা শৌভিকের মামা নিতাই দাস জানান, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে অস্ত্রোপচার হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। শঙ্কা ছিল কলকাতার কোনও সরকারি হাসপাতালে বেড পাওয়া নিয়েও।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৩
Share:

চিকিৎসা: অস্ত্রোপচারের পর শৌভিক দাস। নিজস্ব চিত্র

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাঁ চোখের নীচে আর চোয়ালের কয়েকটি হাড় ভেঙেছিল সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজের ভূগোল অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শৌভিক দাসের। তাঁকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, আঘাত গুরুতর। দরকার উন্নত চিকিৎসা। তাঁকে ‘রেফার’ করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ বা কলকাতার কোনও হাসপাতালে। চিকিৎসার খরচ নিয়ে আশঙ্কায় পড়েন শৌভিকের পরিজনরা। ভাল করে মুখ খুলতে পারছিলেন না ওই তরুণ। বাঁ চোখের নীচে অসহ্য যন্ত্রণা। চিকিৎসকরা জানান, দ্রুত অস্ত্রোপচার করা দরকার।

Advertisement

সিউড়ি বারুইপাড়ার বাসিন্দা শৌভিকের মামা নিতাই দাস জানান, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে অস্ত্রোপচার হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। শঙ্কা ছিল কলকাতার কোনও সরকারি হাসপাতালে বেড পাওয়া নিয়েও। শেষে হাওড়ার একটি নার্সিংহোমে এ ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয় জেনে সেখানে শৌভিককে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর মেলে, রামপুরহাটের এক চিকিৎসক এ রকম অস্ত্রোপচার করতে পারদর্শী। নিতাইবাবু বলেন, ‘‘হাওড়া বা কলকাতার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করানো হলে খরচ বেশি হতো। তার চেয়ে রামপুরহাটে চিকিৎসা করালে সুবিধা, সে কথা ভেবে রামপুরহাটের শল্য-চিকিৎসক অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।’’ শনিবার সেখানকার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় শৌভিককে। অভিষেকবাবু জানান, ওই তরুণের মুখের হাড় অস্ত্রোপচারে ঠিক করতে ‘টাইটেনিয়াম প্লেট’ দরকার ছিল। তা সব জায়গায় পাওয়া যায় না। এ রকম অস্ত্রোপচারও আগে রামপুরহাট বা বীরভূমে হয়নি। শেষে সব সরঞ্জাম জোগাড় করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় অভিষেকবাবুর সঙ্গে ছিলেন শল্যচিকিৎসক পার্থসুন্দর বিশ্বাস। ঘণ্টাপাঁচেক ধরে অস্ত্রোপচার চলে। অপারেশন থিয়েটারে ছিলেন অ্যানেস্থেটিক শান্তিময় সাহানা, টেকনিশিয়ান উত্তম দাস। অভিষেকবাবু জানান, ওই তরুণের বাঁ চোখের নীচে চারটে হাড় ভেঙেছিল। টাইটেনিয়াম প্লেট দিয়ে সেগুলি জুড়ে দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের দাগ ঢাকতে দেহের অন্য অংশ থেকে চামড়া কেটে বসানো হয় মুখে। নিতাইবাবু জানান, রানিগঞ্জ-মোড়গ্রাম জাতীয় সড়কে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা হয়। অনেক সময় মুখে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। ভাঙে হাড়। সে সব জোড়া লাগাতে বর্ধমান, কলকাতা, ভেলোর বা মুম্বই নিয়ে যাওয়া হয় অনেককে। কিন্তু এ রকম অস্ত্রোপচার জেলায় হচ্ছে জানতে পারলে অনেকে উপকৃত হবেন।

সিউড়ির বিধায়ক তথা বিধানসভার স্থাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য চিকিৎসক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই রকম অস্ত্রোপচার জেলায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement