আমোদপুরে স্টেশনে পদ্ম। —নিজস্ব চিত্র।
রাত পোহালেই লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু। তার আগেই বাজারে পদ্মের আকাল দেখা দেওয়ায় চিন্তিত জেলাবাসী। দুর্গাপুজোর মতো লক্ষ্মীপুজোতেও পদ্মের চাহিদা থাকে। বাজারে পদ্মফুলের দামও বাড়ে এই সময়ে। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু কড়ি ফেললেও পদ্ম যে মিলবেই, এমন নিশ্চয়তা নেই। চাষিরা জানাচ্ছেন, পুজোর মুখে টানা বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে পদ্মচাষে।
ফুলচাষিদের দাবি, আগের তুলনায় এ বার পুকুর থেকে ৫০ শতাংশ কম মিলছে পদ্ম। লক্ষ্মীপুজো এবং কালীপুজোর সময়ে জোগান আরও কমে যাবে। ফলে দামও বাড়বে। শুধু বীরভূম নয়, রাজ্যের সর্বত্র এই ছবি দেখা যাচ্ছে। চাষিরা জানান, চৈত্র থেকে পুকুরে পদ্ম ফুটতে শুরু করে। এ বারও তা-ই হয়েছিল। কিন্তু বাধ সেধেছিল সাম্প্রতিক নিম্নচাপের বৃষ্টি। টানা বর্ষণে বহু পুকুর উপচে গিয়েছে। পদ্মের গাছ গিয়েছে ডুবে। অধিকাংশ পদ্মগাছ মরে গিয়েছে। যার ফলে বাজারে ফুলের জোগানে টান পড়েছে। এখন শিশির পড়ছে রাতভর। তারও প্রভাব পড়েছে চাষে।
রামপুরহাটের পদ্মচাষি ভুবন মণ্ডল, তারাপীঠের নিখিল হাজরা জানান, চাষিরা স্থানীয় বাজার ছাড়াও পদ্মের জোগান দেন জেলার বিভিন্ন এলাকা, কলকাতা, মালদহ, শিলিগুড়িতে। এমনকি, অনেক চাষি ঝাড়খণ্ডের দুমকাতেও পদ্ম পাঠান। নিখিল জানান, তারাপীঠ ও রামপুরহাটে ১০টি পুকুরে তিনি পদ্মের চাষ করেন। তারাপীঠ, রামপুরহাট ও মাড়গ্রামে চারটি পুকুরে পদ্মের চাষ করেন ভুবন। দুই চাষি জানান, নিম্নচাপের বৃষ্টির আগে পুকুর থেকে প্রতিদিন ১০০০-১২০০টি পদ্ম পাওয়া যেত। এখন মিলছে ১০০-১৫০টি। শিশির এবং কুয়াশা বাড়লে সেই সংখ্যা আরও কমবে।
পদ্মচাষিরা জানান, নিম্নচাপের বৃষ্টির আগে ১০০ পদ্ম বিক্রি হত ৩০০-৪০০ টাকায়। এখন সম সংখ্যক পদ্মের দাম হয়েছে ১০০০ টাকা। দুর্গাপুজো থেকেই বাজারে পদ্মের দর বেড়েছে। অষ্টমী ও নবমীতে কিছু জায়গায় আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে ১০৮টি পদ্মের মালা। কোথাও একশোটি পদ্মের দাম ছিল প্রায় দু’হাজার টাকা। দুর্গা এবং লক্ষ্মীপুজোয় পদ্মের জোগানে টান পড়ার আশঙ্কায় অনেক চাষি হিমঘরে ফুল সংরক্ষণ করেছিলেন।
তারাপীঠের সন্ধিগড়া বাজারের এক পদ্মচাষি জানান, দুর্গাপুজোর সময়ে কলকাতা, শিলিগুড়ি, দুমকায় পদ্মের জোগান দিয়েছেন তিনি। সাঁইথিয়ায় হিমঘরে ২৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে পদ্ম রাখা হয়েছিল।
দুর্গাপুজোয় জোগান দেওয়ার জন্য তিনি হিমঘরে প্রায় ২২ প্যাকেট পদ্ম রেখেছিলেন। প্রতি প্যাকেটে ১০০০টি ফুল ছিল। লক্ষ্মীপুজোর জন্য পড়ে রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন হাজার ফুল। সেগুলি দুমকা, কলকাতা, রামপুরহাট ও তারাপীঠের বাজারে পাঠানো হবে। স্থানীয় চাষিদের থেকেও পদ্ম কিনে লক্ষ্মী পুজোর চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করবেন বলে জানালেন। তবে দাম বাড়বে সে সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত পদ্মচাষিরা।