অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে

ঠিবায় গুলিবিদ্ধ সিপিএম কর্মী

সিপিএম কর্মীকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে লাভপুরের ঠিবা গ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লাভপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৪
Share:

বোলপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুফল বাগদি। বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

সিপিএম কর্মীকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে লাভপুরের ঠিবা গ্রামে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পুকুর থেকে স্নান করে বাড়ি ফিরছিলেন সিপিএম কর্মী সুফল বাগদি। অভিযোগ, ওই সময় তাঁকে পিছন থেকে মোটরবাইকে ধাক্কা মারেন এক তৃণমূল কর্মী। তা নিয়ে দু’জনের বচসা হয়। সুফলের মা আরাধনাদেবীর অভিযোগ, ‘‘আমরা সিপিএম করি বলে ওদের আগে থেকেই আক্রোশ ছিল। সেই রাগ মেটাতেই ওই তৃণমূল কর্মী হঠাৎ গুলি চালিয়ে দেয়। বোমাও মারে।’’

গুরুতর জখম অবস্থায় সুফলকে উদ্ধার করে স্থানীয়েরাই প্রথমে লাভপুর, পরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। সুফলের ডান হাত এবং ঘাড়ে গুলি লেগেছে। রাতের দিকে বোলপুর হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, সুফলের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।

Advertisement

ঠিবা গ্রামটি এক সময় বামেদের ‘নিয়ন্ত্রণে’ ছিল। ওই এলাকা থেকেই একাধিকবার বিধায়ক হয়েছেন রাধানাথ চট্টোরাজ, সুনীল মজুমদারেরা। সুনীলবাবু সিপিএমের জেলা সম্পাদক এবং মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ওই পঞ্চায়েতে এলাকারই কল্যাণপুরের আয়ুব শেখ বিডিও অফিসে রেশন-কাণ্ডে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান। তারপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়িতে যান। অনেকের মতে, তারপর থেকেই ওই এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব বাড়ে। বিনা প্রতিন্দ্বন্দিতায় পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। ক্রমশ কোণঠাসা হয় সিপিএম।

ভোটের মুখে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, দেওয়াল লিখন থেকে ফ্লেক্স, ফেস্টুনে সমানে টক্কর দিচ্ছে সিপিএম। ‘সিপিএম করি’ বলার মতো লোকের সংখ্যাও কম ছিল না এলাকায়। এলাকার এক তৃণমূল নেতার স্বীকারোক্তি, ‘‘ভোটের মুখে ওই এলাকা আমাদের চিন্তায় রেখেছিল।’’ তার উপরে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের পাশাপাশি যোগ দিয়েছিলেন কিছু বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীও। ভোটের ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, রাজ্যের আর পাঁচটা জায়গার মতো এই এলাকাতেও বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে শাসকদল।

ওই কেন্দ্রের এ বারের সিপিএমের প্রার্থী মাহফুজুল করিমের অভিযোগ, ‘‘ভোটে জেতার পর থেকেই আক্রমণ শুরু করেছে শাসকদলের নেতাকর্মীরা।’’ ঘটনা হল, বিধানসভা ভোটের আগে দলীয় পতাকা ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সিপিএম-তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে তেতে ওঠে ঠিবা গ্রাম। সিপিএমের অভিযোগ ছিল, পুলিশের সহযোগিতায় তৃণমূল কর্মীরা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর চালিয়েছে। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে তৎকালীন ওসি দেবাশিস ঘোষকে সরানোর দাবিতে সরব হন বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশন দেবাশিসবাবু সরিয়েও দেয়। ভোটের পর অবশ্য স্বপদে বহাল হন তিনি।

সে কথা মনে করিয়ে সিপিএম প্রার্থী মাহফুজুলের অভিযোগ, ‘‘পক্ষপাতদুষ্ট ওসি ফেরার পর থেকেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে লাগামছাড়া সন্ত্রাস চালাচ্ছে।’’ প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের কথায়, ‘‘গুলি-বারুদের ব্যবহার তৃণমূলের একচেটিয়া সংস্কৃতি। এ আর নতুন কথা কি?’’ এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করতেই দলীয় কর্মীকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয়েছে, অভিযোগ তাঁর।

এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা তথা দলের জেলা সহ সভাপতি আব্দুল মান্নান বিষয়টি জানা নেই বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। বারবার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী। জবাব দেননি এসএমএস-এর। এলাকার এক তৃণমূল নেতার অবশ্য দাবি, সিপিএমের লোকজনই তাঁদের উপরে চড়াও হয়। তবে গুলি চালানোর অভিযোগ মানেননি তিনিও।

এ দিকে, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উড়িয়ে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। গ্রামে উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement