খালি হাতে। বরাবাজারের টকরিয়া গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।
চাল বাড়ন্ত। তাই গত দেড় মাস ধরে হাঁড়ি চড়ছে না। ছবিটা দুঃস্থ গৃহস্থের হেঁসেলের নয়, বরাবাজার ব্লকের বেশ কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের। অপুষ্টি দূর করতে খোদ সরকার সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের অধীনে যাদের উপযুক্ত খাবারের দায়িত্ব নিয়েছিল, সেই মা এবং শিশুরা শুকনো মুখে রোজ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে ফিরে আসছে। বড়জোর জুটছে একটু ছাতু।
কিন্তু কেন এই অবস্থা? ওই ব্লকের কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সুপারভাইজরদের চালের জোগান বন্ধ। অন্যদিকে, জেলা পরিষদের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ নিয়তি মাহাতো বলেন, ‘‘জেলায় তো চালের জোগানের কোনও সমস্যা নেই! তবে বিশেষ ভাবে ওই ব্লক সম্পর্কে আমার কাছে কোনও খবর নেই।’’
বরাদ্দ চাল কোথায় যাচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলে তদন্তের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছেন বরাবাজারের বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপ। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘এর পিছনে বড়সড় দুর্নীতি থাকতে পারে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাবাজার ব্লকে মোট ২৩৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি অর্থবর্ষে চার বার ভারতীয় খাদ্য নিগম অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রপিছু ৫০ ক্যুইন্টাল চাল দেয়। ‘স্টোরিং অ্যান্ড কেরিয়ার এজেন্ট’ সেই চাল গুদাম থেকে তুলে প্রতি কেন্দ্রে পৌঁছে দেন। অভিযোগ, এপ্রিল থেকে নতুন অর্থবর্ষ শুরুর পরে দু’মাস পার হতে চললেও বরাবাজার ব্লকের অধিকাংশ কেন্দ্রই বরাদ্দ পায়নি।
ব্লকের সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক শিমসন মুর্মু বলেন, ‘‘আমি ১৭ মে এই ব্লকের দায়িত্ব পেয়েছি। ২৫ মে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে জানতে পারি প্রায় ১৩৮টি কেন্দ্রে রান্না চালু রয়েছে। বাকিগুলিতে বন্ধ।’’ বিষয়টি জেলাশাসককে জানানো হয়েছে বলে শিমসনবাবু জানিয়েছেন।
সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হিসেবের খাতায় লেখা রয়েছে, ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্লকের গুদামে চাল জমা পড়েছে। তারপর এজেন্ট সেই চাল তুলেও নিয়ে গিয়েছেন। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে ওই ব্লকের এজেন্ট প্রসেনজিৎ সিংহ মল্লর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার পরে কিছু কেন্দ্রে চাল পৌঁছয়। কিন্তু সমস্ত কেন্দ্রে চাল পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ।
বুধবার টকরিয়া গ্রামের গিয়ে দেখা গেল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছে স্থানীয় বেশ কিছু শিশু। তাদের মধ্যে লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো, শ্যামল মাহাতো, সুনীতা মাহাতোরা বলে, ‘‘অনেক দিন আমাদের এখানে রান্না হয়নি।’’
ওই কেন্দ্রের কর্মী সমলা মাহাতো বা রায়গাড়ার ইভারানি মাহাতোরা জানান, রান্না বন্ধ রয়েছে গত মাসের গোড়া থেকেই। পুরনো বরাদ্দ থেকে বাঁচিয়ে রাখা চাল দিয়ে কিছু কেন্দ্রে রান্না চালানো হচ্ছিল। কিন্তু সেই ভাঁড়ারও ফুরোচ্ছে। যেমন, ধবড়া গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের কর্মী রীনা মাহাতো জানান, বুধবার অবধি কোনও রকমে টানাটানি করে রান্না চালানো হয়েছে।
কিন্তু আর সম্ভব নয়। ভাঁড়ার এখন একেবারে শূন্য। ওই কেন্দ্রগুলির সুপারভাইজর মঞ্জুশ্রী সিংহ বলেন, ‘‘প্রকল্প আধিকারিককে সব জানিয়েছি।’’
জেলা পরিষদের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। কেন রসদ পৌঁছয়নি তা তদন্ত করে দেখা হবে।’’ বিষয়টিতে কোনও দুর্নীতি ধরা পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক। প্রসেনজিৎবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
তাঁর মা তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য সুমিতা সিংহ মল্ল বলেন, ‘‘মণীন্দ্রবাবু রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থ করার জন্য জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তদন্ত হলেই সে কথা প্রমাণিত হয়ে যাবে।’’