সিসিটিভি ফুটেজ। (ডান দিকে) অভিযোগকারী দম্পতি। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি তৈরি করার সময় এক দম্পতির কাছে মোটা টাকা তোলা চেয়েছিলেন কয়েকজন। তখন থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযুক্তেরা এ বার সেই দম্পতির উপর চড়াও হয়ে স্বামীকে মারধর করল। বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রীও শ্লীলতাহানির শিকার হন বলে অভিযোগ। মারধরের সিসিটিভি-র ফুটেজ থানায় জমা দিয়ে অভিযোগ দায়েরও করা হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের ওই হামলায় পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। ঘটনাস্থল বাঁকুড়া শহরের গোবিন্দনগর লাগোয়া দীনবন্ধুপল্লি।
কেন পুলিশ ধরতে পারেনি? বাঁকুড়া সদর থানার দাবি, তদন্ত চলছে। জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরাও বলছেন, ‘‘তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
যদিও সে আশ্বাসে ভয় কাটছে না ওই দম্পতি দেবাশিস দাস ও মিঠু রায়ের (দাস)। গোবিন্দনগর এলাকায় দেবাশিসবাবুর মিষ্টির দোকান। তাঁদের আদিবাড়ি বাঁকুড়া শহরের কেওট পাড়া এলাকায়। তাঁরা জানান, দেবাশিসবাবুর বাবা উদয়কুমার দাস বছর পনেরো আগে দীনবন্ধু পল্লিতে প্রায় দু’কাঠা জায়গা কিনেছিলেন। দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, ‘‘বাড়ি তৈরির সময় এলাকার কয়েক জন এসে দেড় লক্ষ টাকা তোলা দাবি করে। আমরা মানিনি। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাই। পাড়ার কয়েকজন পাশে দাঁড়ানোয় কোনও রকমে বাড়ির কাজ অনেকটা করা হয়।’’
দম্পতির দাবি, গোলমালের ভয়ে তাঁরা তখন বাড়িতে আসেননি। বাড়িটি একপ্রকার পড়েই ছিল। এক বছর আগে মিঠুদেবী ও দেবাশিসবাবু তাঁদের আড়াই বছরের সন্তান দেবজ্যোতিকে নিয়ে ওই বাড়িতে আসেন। তখন ফের ওই লোকজন তাঁদের কাছে দেড় লক্ষ টাকা তোলা দাবি করতে থাকে বলে অভিযোগ। গোলমালের আঁচ পেয়ে দম্পতি বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসান।
ডিসেম্বর মাসের গোড়ায় তাঁরা বাড়ির বাকি কাজে হাত দেন। তাতে টাকা চেয়ে চাপ বাড়তে থাকে। দেবাশিসবাবুর দাবি, তাঁরা তিনবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। মানবাধিকার কমিশন থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও তা পাঠিয়েছেন। এতে অভিযুক্তেরা
চটে যান।
মিঠুদেবীর অভিযোগ, “মঙ্গলবার রাতে আমি ও স্বামী বাড়ি ফিরছিলাম। বাড়ির সামনে ওরা স্বামীকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে। মোটরবাইকটি ভেঙে দেয়। আমাকেও হেনস্তা করে। কোনওরকমে পালিয়ে গিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ি। খবর দিতে পুলিশ এসে আমাদের বাঁচায়।’’ তাঁর আক্ষেপ, পুলিশকে সিসিটিভির ফুটেজও দিয়েছি। কিন্তু কেউ ধরা পড়েনি।
বৃহস্পতিবার পাড়ায় গিয়ে খোঁজ করলেও অভিযুক্তদের বাড়ি কেউ চিনিয়ে দিতে চাননি। তবে এটুকু জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও দু’জন ছোটখাটো ব্যবসা করেন। তবে পড়শিদের একাংশের ক্ষোভ, দেবাশিসবাবুরা পঞ্চায়েতের রাস্তার কিছুটা দখল করে নিজেদের গাড়ি তোলার জন্য র্যাম্প তৈরি করছেন। এ নিয়ে তাঁরা জুনবেদিয়া পঞ্চায়েতে অভিযোগও জানিয়েছেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বকুল পাত্র বলেন, “ওই পরিবার অবৈধ নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পেয়ে কাজটি আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছি।’’ যদিও দম্পতির দাবি, ‘‘অভিযোগ মিথ্যা। আর তাই যদি হয় তাহলে আদালত রয়েছে। আমরা আর কতদিন ভয়ে ভয়ে বাঁচব?’’