হাল: নিজের বাড়ির সামনে অজিত মুদি। নিজস্ব চিত্র
কিস্তিতে কিস্তিতে নাকি সরকারি টাকা এসেছে! সরেজমিন দেখেশুনে পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক রিপোর্ট দিয়েছেন— বাড়ি ‘রেডি’। খটকা একটাই। খোদ প্রাপক ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি কখন, কী ভাবে এমন একটা সাত কাণ্ড রামায়ণ লেখা হয়ে গেল! তাঁর বাড়ি তো তৈরিই হয়নি। ইন্দিরা আবাস যোজনার প্রাপক তালিকা দেখে অবাক অজিত মুদি বিষয়টা ঠিক কী হয়েছে তা জানতে চেয়ে সম্প্রতি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
গল্পটা অনেকটা শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘ওয়েল ডান আব্বা’-র মতো। সেখানে আরমান আলির জমিতে সরকারি প্রকল্প কুয়ো খোঁড়া হয়েছিল। কাগজে কলমে কাজে কোনও খুঁত নেই। কিন্তু কুয়োও নেই। এই অবস্থায় আরমান আর তাঁর মেয়ে মুসকান থানায় গিয়ে কুয়ো চুরি হয়ে গিয়েছে বলে ডায়েরি করেন। তার পরে শুরু হয় বিরাট ডামাডোল।
কাশীপুরের কালীদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের কেলাহি গ্রামের বাসিন্দা অজিত মুদিরও জরাজীর্ণ একটা বাড়ি রয়েছে। এক চিলতে জমিতে চাষ আর অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে দিন গুজরান হয়। বাড়ি মেরামতের ইচ্ছে থাকলেও করে উঠতে পারেননি। অজিতের দাবি, বছর তিনেক আগে স্থানীয় এক পঞ্চায়েত সদস্যের মাধ্যমে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য নথিপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, ‘‘কথা মতো সমস্ত কাগজ জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তিন বছর পরেও বাড়ি তৈরি হয়নি।’’
এলাকার বিজেপি নেতা হরেন্দ্রনাথ মাহাতোর দাবি, অজিত একা নন। তাঁর মতো বেশ কয়েক জনের কথা তাঁরা সম্প্রতি জানতে পারেন, আবেদন করার দীর্ঘ দিন পরেও যাঁদের বাড়ি তৈরি হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন দফতরের ওয়েবসাইটে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকদের তালিকা খুলে দেখা যায়, অজিত মুদির বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে সেখানে বলা হয়েছে। লেখা রয়েছে, পুরুলিয়া জেলা পরিষদ অজিতের নামে ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে, ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি বাড়ি বরাদ্দ করেছে। ক্রমিক নম্বর ২২৮। ২০১৫ সালের ১৫ জুন অজিতকে কিস্তির শেষ টাকা দেওয়া হয়েছে। হরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘ওয়েবসাইট দেখে আমাদেরও চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। অজিত কেন এখনও বাড়ি পেলেন না তা জানতে আমরা পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হই। কিন্তু কোনও সদুত্তর মেলেনি।’’ অজিতের বক্তব্য, ‘‘সরকারি রিপোর্টে বলা হচ্ছে নাকি বাড়ি হয়েছে। তাহলে নির্ঘাত আমার নামে বরাদ্দ টাকা কেউ আত্মসাৎ করেছে। আমি তদন্ত চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
কালিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উত্তম মণ্ডলের দাবি, বিষয়টি তাঁর বিশদে জানা নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘হয়তো উনি অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুল দিয়েছিলেন। টাকা ব্যাঙ্কেই আটকে রয়েছে। আমরা ওঁকে বলেছিলাম, বাড়িটা তৈরি করে দেওয়া হবে। তার পরেও বিরোধীদের প্ররোচনায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন।’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত হবে।’’