শ্রান্ত: বাঁকুড়া স্টেশনে নামার পরে বাস ধরতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক ও অসুস্থেরা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
খবর ছিল কর্নাটক থেকে ট্রেনে শুধু ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়ার পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাঁকুড়া স্টেশনে আসবেন। কিন্তু মঙ্গলবার ভোরে ট্রেন পৌঁছতে দেখা গেল, শুধু ওই দু’টিই নয়, মোট কুড়িটি জেলার বাসিন্দা এসে নামলেন স্টেশনে। তৎপরতার সঙ্গেই সব সামাল দিল প্রশাসন।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ বলেন, “সমস্ত জেলার বাসিন্দাদের নিজ নিজ এলাকায় বাসে করে পাঠানো হয়েছে। শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে ৪৭টি বাস নামানো হয়। কোনও সমস্যা হয়নি। ট্রেনে ফেরা সবাইকে ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ পাঠানো হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, যাত্রীদের লালারস পরীক্ষার ব্যবস্থা তিনটি আলাদা জায়গায় করা হয়। বাঁকুড়া স্টেশন, ধলডাঙা ও ওন্দা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাঁকুড়া স্টেশনে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার ৪৩ জনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, “স্টেশনে নামার পর থেকে শ্রমিকদের মধ্যে যাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় থাকে সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রত্যেক যাত্রীর হাতে আমরা স্যানিটাইজ়ার দিয়েছি। মাস্কও দেওয়া হয়েছে সবাইকে।’’
প্রশাসন সূত্রে প্রথমে খবর মিলেছিল, বেঙ্গালুরু থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রবিবার বাঁকুড়ায় আসবে ট্রেনটি। জানানো হয়েছিল, ওই ট্রেনে ঝাড়গ্রাম জেলার ৫২৭ জন ও বাঁকুড়া জেলার ১,৩৪৭ জন পরিযায়ী শ্রমিক আসবেন। সে দিন অবশ্য ট্রেন আসেনি। রেল সূত্রে জানানো হয়েছিল, পরে ট্রেন আসবে।
মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা নাগাদ ট্রেনটি বাঁকুড়া স্টেশনে আসে। ট্রেনে অবশ্য ঝাড়গ্রাম জেলার কোনও ব্যক্তি ছিলেন না। বাঁকুড়া জেলার ছিলেন ৩২ জন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই ট্রেনে রাজ্যের ২০টি জেলার মোট ১,২৪৭ জন পরিযায়ী শ্রমিক ও কিছু অসুস্থ মানুষ এসেছেন।
বাঁকুড়ার লোকজন ছাড়াও ওই ট্রেনে ফিরেছেন পুরুলিয়ার তিন জন। এ ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুরের ৬০, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৩, পূর্ব বর্ধমানের ১২৬, হুগলির ৮৩, হাওড়ার ৫৬, কলকাতার ১২, মুর্শিদাবাদের ১৭১, উত্তর ২৪ পরগনার ৭৫, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৯৪, দার্জিলিং-এর ১০, আলিপুরদুয়ারের ১১, কোচবিহারের ৪৫, উত্তর দিনাজপুরের ৩৩, দক্ষিণ দিনাজপুরের ৪২, বীরভূমের ১২৯, জলপাইগুড়ির ৫৯, মালদহ ৯৫ ও নদিয়ার ৮৮ জন শ্রমিক এসেছেন।
সূত্রের খবর, সোমবার রাতে জেলা প্রশাসন জানতে পারে, কুড়ি জেলার শ্রমিক আসছেন। সেই মতো রাতেই ওই জেলাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে বাঁকুড়া প্রশাসন। শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে ৪৭টি বাসের ব্যবস্থাও করা হয়। যার মধ্যে ৪২টি এসবিএসটিসি ও পাঁচটি বেসরকারি বাস।
সোমবার বাঁকুড়া স্টেশনে গিয়ে যাত্রীদের নামানোর প্রস্তুতি দেখে আসেন বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘খবর নিয়ে জেনেছি, শ্রমিকেরা ঠিক ঠাক ভাবে এসেছেন।’’ সোমবার রাতে স্টেশনে যান বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মেন্টর তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী, বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত। অরূপবাবু বলেন, “সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে শ্রমিকদের জন্য আমরা জলখাবারের ব্যবস্থা করেছি।”