সুরক্ষা বিধি মেনে কাগজ বিলি করছেন ইন্দ্রজিৎ। কাগজ পড়ছেন মহম্মদ ইব্রাহিম। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
সংবাদপত্র থেকে কি করোনা ভাইরাস সংক্রামিত হয়?
করোনাভাইরাস নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের সঙ্গে করোনা ভাইরাস আছে। আগের করোনা ভাইরাস থেকে বর্তমানের করোনা ভাইরাস মিউটেটেড করোনা ভাইরাস। এই নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ড্রপলেট ইনফেকশন, অর্থাৎ একজন মানুষ থেকে আর একজন মানুষের মধ্যে তার হাঁচি, কাশির সময় বা তার কথা বলার সময় তার মুখের থেকে যে লালা মিশ্রিত জীবাণু বের হয় সেখান থেকে তাঁর কাছাকাছি, সংস্পর্শে আসা লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু খবরের কাগজ তৈরি হয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। সেখানে কোনও মানুষ হাত দিয়ে ঘাঁটাঘাটি করেন না। মেশিনের মধ্য দিয়ে সেই কাগজ তৈরি হয়। কাগজ তৈরি হওয়া, ছাপা, বিলি সবটাই প্রায় ছোঁয়াচহীন পদ্ধতিতে হয়। সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের মতো ভাইরাসের কাগজের মাধ্যমে একজনের থেকে আর একজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়িয়ে আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে।
সরাসরি ড্রপলেট ইনফেকশন ছাড়া আর কোনও ভাবে কি ভাইরাস ছড়াতে পারে?
সরাসরি ড্রপলেট ইনফেকশন ছাড়া একটি কারণে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে, তা হচ্ছে ফোমাইট। ফোমাইট মানে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সর্দি কাশি হাঁচির সঙ্গে সেই ভাইরাস তার কাছাকাছি কোনও সারফেস বা জড়বস্তুর উপরে গেল। তা তার ব্যবহার করা গ্লাস হতে পারে বা দরজার হাতল, সুইচ বোর্ড, ইত্যাদি হতে পারে। সেই জায়গা কোনও সুস্থ ব্যক্তি অজান্তে স্পর্শ করে তার হাতটা মুখে বা চোখে বা নাকে দিলে ছোঁয়াচের মধ্য দিয়ে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই মুখে-চোখে-নাকে হাত না দেওয়া, বারবার হাত ধোওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত দেখা গিয়েছে করোনা ভাইরাস প্রধাণত ছড়িয়ে পড়ছে সরাসরি ড্রপলেট ইনফেকশন থেকেই। তবে এমন নয় যে আমি কারও কাছে গেলাম সঙ্গে সঙ্গে সংক্রামিত হয়ে পড়লাম। দীর্ঘক্ষণ আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখ, মাস্ক পরার কথা বলা হচ্ছে। হঠাৎ করে কয়েক সেকেন্ডের জন্য কেউ যদি সংস্পর্শে আসেনও সেক্ষেত্রে সংক্রামিত হওয়ার প্রবণতা কম।
কঠিন কোনও বস্তুর উপরে কতক্ষণ করোনাভাইরাস টিকে থাকতে পারে?
যেহেতু ভাইরাসটি নতুন তাই এখনও এ নিয়ে গবেষণা চলছে। দেখা গিয়েছে গ্লাসের মধ্যে চার দিন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সক্রিয় থাকতে পারে, স্টিলের ক্ষেত্রে এটা তিনদিন। কাঠের ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন দিন। প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে তিন দিন। তবে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। নরম কাগজ, যেমন খবরের কাগজ এ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস জীবাণু ২৪ ঘণ্টার কম সময় টিকে থাকার সম্ভাবনা। তবে খবরের কাগজের মাধ্যমে সংক্রমণের তথ্য এখনও উঠে আসেনি।
তাহলে কি টাকা, সংবাদপত্র এই সমস্ত কিছু ঘাঁটাঘাটি করা যাবে না ?
নিশ্চয় করব। কারণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খবরের কাগজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টাকার লেনদেন এটাও আমাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত দেখা গিয়েছে খবরের কাগজের মধ্যে যে প্রিন্টের কালি ব্যবহার করা হয় সেটা সংক্রামক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
খবরের কাগজ ছাপা থেকে পাঠকের কাছে পৌঁছনো, সব ক্ষেত্রেই বর্তমানে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখেই করা হয়। বিক্রেতারা মাস্ক, গ্লাভসও ব্যবহার করছেন। সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা কতটা?
যিনি খবরের কাগজ দিচ্ছেন তিনি যদি গ্লাভস পরেন, মাস্ক পরেন এবং পাঠকের দরজায় কোনও রকম সংস্পর্শ ছাড়া খবরের কাগজ পৌঁছে দেন তাহলে সেক্ষেত্রে সংক্রমণের প্রবণতা অনেক কম।