প্রতীকী ছবি
লকডাউনে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ থেমে গিয়েছে দেশজুড়েই। তবে তাতে থামেনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুর। তারই প্রমাণ মিলল সিউড়িতে। বৃহস্পতিবার সিউড়ির সোনাতোড়পাড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর মৃতদেহ সৎকারে এগিয়ে এলেন মুসলিমরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম শ্যামাশিস চট্টোপাধ্যায়। তিনি তাঁর বাড়ির উপরে একটি হোটেল চালাতেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি অবিবাহিত ছিলেন। সিউড়ির সোনাতোড়পাড়ায় তিনি এবং তাঁর ভাই একসঙ্গে থাকতেন। শ্যামাশিসবাবু দীর্ঘদিন লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি কিছুদিন আগে ভিন্ রাজ্যে চিকিৎসাও করিয়ে আসেন। কিন্তু তারপরেও তিনি নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। কিছুদিন আগেও তিনি চিকিৎসার জন্য সিউড়ির একটি বেসরকারি নার্সিংহোমেও ভর্তি হন। স্থানীয়রা জানান, এমনকি শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি তাঁর হোটেলটি পর্যন্ত চালাতে পারছিলেন না। বুধবার গভীর রাতে তিনি তাঁর বাড়িতেই মারা যান। কিন্তু লকডাউন এবং করোনা আতঙ্কের মৃতদেহ সৎকারের কাজে আশপাশের কেউই সেভাবে এ গিয়ে আসতে পারেননি। তখনই ওই মৃতদেহ সৎকারের জন্য মৃতের ভাই শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের দিকে সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দা কাজি আবু বাদশা, নূর আলম ইসলাম, কাজি বাপ্পা, মফিজুল ইসলাম-সহ অন্যরা।
শিবাশিসবাবু জানান, হিন্দু ধর্মের রীতি মেনে দেহ সৎকারের ব্যবস্থাপনায় তাঁকে সহযোগিতা করেন ওঁরা সকলে। এরপরেই বৃহস্পতিবার সকালে সিউড়ি শহর সংলগ্ন সতীঘাট শ্মশানে শ্যামাশিসবাবুর মৃতদেহ সৎকার করা হয়। শ্যামাশিসবাবুর মুখাগ্নি করেন তাঁর ভাই শিবাশিস। তবে, কাঁধে করে মৃতদেহ শ্মশান নিয়ে যান মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। কাজি আবু বাদশা বলেন, ‘‘হিন্দু হোক বা মুসলিম আমাদের কর্তব্য হল মানুষ হিসেবে একে অপরের সুখ দুঃখে পাশে থাকা। তাই আমরা হিন্দু ভাইয়ের সৎকার কাজে এগিয়ে এসেছি।’’ শিবাশিসবাবু বলছেন, ‘‘দাদার শেষকৃত্যের জন্য আমার দু’একজন বন্ধু ছাড়া কাউকে পাইনি। সেই সময় পাড়ার কয়েকজন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নিজে থেকে এগিয়ে আসেন।’’
এই অভিজ্ঞতার পরে শিবাশিসবাবু বলছেন, ‘‘ওঁরা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে এসেছেন। আমার খুবই ভাল লেগেছে। জাত ধর্ম নয়, মানবতাই যে সব সময় এগিয়ে থাকবে তারই একটা নজির হল এই ঘটনা।’’