পুরুলিয়া শহরের মধ্যবাজার এলাকায় ভিড়। নিজস্ব চিত্র
করোনা-আতঙ্কের মাঝেই রবিবার রাতে ন’মিনিটের ‘অকাল দীপাবলি’তে মেতেছিলেন পুরুলিয়া শহরবাসীর একাংশ। যথেচ্ছ পটকা ফেটেছে। ‘উৎসবে’র চেহারা দেখে প্রশাসনের একাংশের আশঙ্কা ছিল, সকাল হতেই পথে ভিড় বাড়বে। আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, সকাল হতেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সোমবার শহরের অনেক জায়গায় ভিড় দেখা যায়। ফলে, বাধ্য হয়েই পথে নামতে হয় পুলিশকে। ‘লকডাউন’ মেনে মানুষকে গৃহবন্দি থাকার পরামর্শ দিতে দেখা যায় পুলিশকর্মীদের।
করোনা-মোকাবিলায় দেশবাসীর ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার রাত ৯’টা থেকে ন’মিনিট বাড়িতে বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে প্রদীপ, মোবাইল বা টর্চ জ্বালার আহ্বান জানিয়েছিলেন। পুরুলিয়া শহরের চিত্র বলছে, শহরবাসীর একাংশ শুধু প্রদীপ বা টর্চ জ্বালিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। যথেচ্ছ বাজিও ফাটিয়েছেন তাঁরা। পুরুলিয়া পুরসভার এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসে দেশে একশোর বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও শহরে আমাদের সহ-নাগরিকদের একাংশের আচরণে শোকের বহিঃপ্রকাশ ছিল না। বরং ছিল উৎসবের আমেজ।’’
এ দিন সকালে দেখা যায় রাস্তায় বেরিয়েছেন শহরের বিভিন্ন পাড়ার মানুষজন। বড়হাট, নামোপাড়া, মধ্যবাজার, চকবাজার, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, হাসপাতাল মোড়, ভিক্টোরিয়া স্কুল মোড়—সর্বত্র ছবিটা ছিল এক। নামোপাড়ার এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে, লকডাউন উঠেই গিয়েছে।’’ পাড়ার মোড়ে-মোড়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল রবিবার রাতের ‘অকাল দীপাবলি’। দেখা গিয়েছে, মোটরবাইকে চড়ে ঘুরছেন অনেকে। ‘সামাজিক দূরত্ব’ ঘুচিয়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বাজারও করছেন।
শহরবাসীকে ঘরবন্দি রাখতে সক্রিয় ছিল পুলিশ। শহরের রাস্তায় মাইক নিয়ে প্রচার করে শহরবাসীকে ঘরে থাকার আবেদন জানান পুলিশকর্মীরা। এক পুলিশ আধিকারিককে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বলতে শোনা যায়, ‘শহরবাসীর কাছে অনুরোধ, অযথা রাস্তায় বেরোবেন না। ভিড় করবেন না। প্রয়োজনে মোটরবাইকে এক জনই বেরোন। না হলে এ বার থেকে পুলিশ আইনত ব্যবস্থা নেবে।’’
ব্যবস্থা নেওয়ার দৃশ্যও চেখে পড়েছে। বেলা ১১টা নাগাদ মোটরবাইকে চড়ে পুরুলিয়া শহরের মেন রোড ধরে চকবাজারের দিকে আসছিলেন এক যুবক। মধ্যবাজারে পুরুলিয়া সদর থানার ওসি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গাড়ি আটকান। কোথায় যাবেন জানতে চাওয়ায় ওই যুবক আমতা-আমতা করে বলেন, তিনি হাসপাতালে যাবেন। উত্তরে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকায় পুলিশের ধারণা হয়, স্রেফ ঘুরতে বেরিয়েছেন ওই যুবক। এরপর দেখা যায় তাঁর বাইকের চাবি খুলে নিচ্ছেন এক পুলিশকর্মী।
বেলা ১২টা নাগাদ ট্যাক্সি স্ট্যান্ড মোড়ে দেখা যায়, টোটোয় সওয়ার জনা ছয়েক মহিলা যাত্রী গল্প করছেন। সঙ্গে রয়েছে এক খুদেও। পথ আটকে এক পুলিশকর্তা টোটো চালককে প্রশ্ন করেন, কেন তিনি ‘লকডাউন’ উপেক্ষা করে বেরিয়েছেন। ‘আর বেরোব না’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যান টোটোচালক।
পুরুলিয়া পুরসভার উপপুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুলিশ আবেদন করছে। আমরাও অনুরোধ করছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, অনেকে সে কথা কানে তুলছেন না।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)