আয়োজন: কাকুটিয়া গ্রামে আদিবাসী রীতি মেনে বিয়ে। নিজস্ব চিত্র
বাজেনি সানাই, হয়নি প্যান্ডেল, নিমন্ত্রিতদের পাত পেড়ে খাওয়ানোর কোনও আয়োজনও করা হয়নি। তার পরিবর্তে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নব দম্পতির মুখে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হলো। সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রেখে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিয়ম-নীতি মেনে শনিবার বিয়ে হল বোলপুরের কাকুটিয়া গ্রামে।
শুধু নব দম্পতির মুখে মাস্ক পরিয়ে দেওয়াই নয় যৌতুক হিসেবে মেয়ের পরিবারের তরফ থেকে এ দিন নবদম্পতির হাতে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার তুলে দেওয়া হয়। ইলামবাজার ব্লকের সুখডালা গ্রামের বাসিন্দা বাপি হেমব্রমের সঙ্গে মাস খানেক আগে বিয়ের ঠিক হয় বোলপুরের কাকুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা চন্দনা সোরেনের। ধুমধাম করে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাঁদের। সেইমতো বিয়ের সমস্ত প্রস্তুতিও নিতে শুরু করে দেয় দুই পরিবার। বিয়ের দিন ঠিক হয় ৯ মে। কিন্তু করোনার আবহে সব যেন এক নিমেষেই ওলট পালট হয়ে যায়।
করোনা সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, জমায়েত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু ছেলে ও মেয়ের পরিবার কোনও পক্ষই বিয়ের দিন পিছোতে রাজি ছিল না। তাই নির্ধারিত দিনেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিয়ে সম্পন্ন করলেন দুই পরিবারের কর্তারা। পাত্র বাপি হেমব্রম বলেন, ‘‘বাবা, কাকা, জামাইবাবুদের নিয়ে আমি বিয়ে করতে যাই। মেয়ের বাড়ির তরফ থেকে উপস্থিত ছিলেন মেয়ের পরিবারের কয়েকজন।’’ আদিবাসী সম্প্রদায়ের সমস্ত নিয়ম-নীতি মেনে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখেই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকের মুখেই এদিন ছিল মাস্ক। একইভাবে ছেলের বাড়িতেও পাত পেড়ে খাওয়ানোর বদলে সেই অনুষ্ঠান কাটছাঁট করে গরিব দুস্থদের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাত্রের দাদা সোমনাথ হেমব্রম বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভাইয়ের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা সকলে মিলে ঠিক করেছি, অনুষ্ঠান করে লোক খাওয়ানোর বদলে এই দুঃসময়ে এলাকায় যে সমস্ত গরিব-দুঃস্থ মানুষ রয়েছেন তাঁদের হাতে কিছু খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হবে।’’ ছেলের বাড়ির পক্ষ থেকে রবিবার সেই অঞ্চলের গরিব মানুষদের সাহায্য করা হবে। স্থানীয়েরা বলছেন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের ‘সচেতন-বিবাহ-বাসর’ সকলের জন্যই বার্তা দিল।