পুলিশের পাহারায় চলছে রেশন বিলি। মঙ্গলবার পাঁচড়ায়। নিজস্ব চিত্র
সরকার ঘোষিত হারে কেন রেশন সামগ্রী পাব না, কেন পুরানো কার্ডে রেশন নয়, এমনই নানা প্রশ্ন তুলে জেলার কিছু জায়গায় রেশন ডিলারদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হল। এর সঙ্গে ছড়িয়েছে বিভ্রান্তিও।
মঙ্গলবার সকালে গ্রাহকদের তেমন বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছেন খয়রাশোলের পাঁচড়ার এক রেশন ডিলার। গ্রাহকদের অসন্তোষের ফলে সকালের দিকে ঘণ্টাখানেক রেশন বিলি বন্ধ রাখতে হয় ডিলারকে। পরে খয়রাশোলের থানার ওসি বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। রেশন বিলির সময় আর যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্য দিনভর পাহারায় ছিলেন সিভিক ভালান্টিয়ারেরা। সিউড়িতে এক রেশন ডিলারকে হুমকি দেওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হয় পুলিশকে। খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের এক কর্তা জানান, রেশন বিলিতে কোথাও বিচ্যুতি হয়নি। সরকারি নির্দেশ মেনেই বিলি চলছিল। সূত্রের খবর, ঝামেলা হয়েছে মহম্মদবাজার ব্লকেও।
কার্ড না থাকলেও রেশন পাওয়া যাবে এবং রেশন দোকান খোলা থাকবে— এমনই ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, যাঁদের রেশন কার্ড নেই, তাঁদের রেশন সামগ্রী পাওয়া নিয়ে এখনও কোনও সরকারি নির্দেশ আসেনি। অন্য দিকে, গ্রাহকদের আগামী তিন মাস রেশন সরবরাহের ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারও। গ্রাহকদের অবশ্য দাবি, কবে থেকে কী ভাবে সামগ্রী মিলবে, সেটা রাজ্য না কেন্দ্র দেবে, যাঁদের কার্ড নেই তাঁরা কী ভাবে রেশন পাবেন, পুরনো কার্ডে কেন রেশন নয়, এমন নানা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তার থেকেই বিক্ষোভ হচ্ছে।
পাঁচড়ার রেশন ডিলারের আওতায় সাত হাজার গ্রাহক রয়েছেন। তাঁদের একটা অংশকে এ দিন রেশন দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু, বিলি শুরু হওয়া মাত্রই গ্রাহকদের একটা অংশ প্রশ্ন করতে শুরু করেন, টিভিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রত্যেক পরিবারকে ৫ কিলো করে চাল গম দেবেন, কোথায় সে সব? কেউ বলেন, ‘‘কার্ড না থাকলেও রেশন পাওয়ার কথা। কেন রেশন ডিলার দেবেন না?’’ অন্য দিকে, পুরানো রেশন কার্ডে কেন জিনিস মিলবে না, এই অভিযোগে রেশন দোকানে আগুন লাগানোর হুমকি দেওয়া হয় সিউড়িতে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনা বা এনএফএসএম চালুর পরে আর্থিক অবস্থা অনুসারে তিন ধরনের কার্ড দেওয়া হয়েছে। প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড (পিএইচএইচ), সুগার প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড (এসপিএইচএইচ) এবং অন্ত্যোদয় অন্ন-যোজনা (এএওয়াই)। রাজ্য সরকার খাদ্যসাথী নিয়ে আসে। রাজ্যের সেই যোজনায় কার্ড দু’ধরনের। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা বা এরকেএসওয়াই-১ এবং আরকেএসওয়াই-২। এ ছাড়া জঙ্গলমহল এলাকায় রয়েছে আদিবাসীদের জন্য স্পেশ্যাল বিপিএল কার্ড। সব মিলিয়ে জেলায় কার্ড রয়েছে ৪০ লক্ষ। তার মধ্যে আরকেএসওয়াই-২ প্রায় ৫ লক্ষ।
দফতর সূত্রে খবর, অন্ত্যোদয় অন্ন-যোজনা কার্ডহোল্ডারেরা (পরিবার পিছু) মাসে ১৫ কিলো চাল ও ২০ কিলো আটা পাবেন। প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড সুগার প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড কার্ড পিছু ২ কিলো চাল এবং ৩ কিলো আটা। আরএসকেওয়াই ১ কার্ড হোল্ডাররা সম পরিমাণ চাল ও আটা পান। এ ছাড়া স্পেশ্যাল আদিবাসীদের (জঙ্গলমহল) একটি কার্ড রয়েছে, যে কার্ড পিছু ৮ কিলো চাল ৩ কিলো গম পান। সকলেই এখন বিনামূল্যে যে সুযোগ পাবেন। শুধু আরকেএসেওয়াই ২ কার্ড পিছু ১ কিলো চাল এক কিলো গম পাবেন। কিন্তু, নির্ধারিত মূল্য দিতে হবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হয়েছে। কিন্তু, কে কত জিনিস পাবেন সেটা নিয়েই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।