অপেক্ষা: দূরত্ব-বিধি মেনে টাকা তোলার লাইন কীর্ণাহারে। নিজস্ব চিত্র
প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনার অনুদান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
সম্প্রতি জনধন অ্যাকাউন্টভুক্ত মহিলাদের জন্য লকডাউন চলাকালীন আর্থিক অনুদান বাবদ ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তা নিয়েই জেলার বিভিন্ন জায়গায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন ও ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ‘স্বাভিমান যোজনায়’ সকলের শূন্য ব্যালান্সের অ্যাকাউন্ট খুলতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র। ১০০ দিন কাজের মজুরি-সহ বিভিন্ন সরকারি আর্থিক সহায়তা উপভোক্তাদের ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া শুরু হয়। ২০১৪ সালের ১৫ অগস্ট ফের ‘প্রধানমন্ত্রী জনধন’ প্রকল্পের সূচনা হয়। সেই প্রকল্পেও শূন্য ব্যালান্সের অ্যাকাউন্ট খুলতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় সরকার। এই দু’রকম অ্যাকাউন্টের জেরেই বিভ্রান্তি হচ্ছে বলে গ্রাহকদের দাবি।
একাধিক ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে যাঁরা জনধন প্রকল্পে শূন্য ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, কেবল সেই সব মহিলা উপভোক্তার নামেই লকডাউনের অনুদান বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু টাকা পাওয়ার আশায় ২০১০ সালে অ্যাকাউন্ট খোলা মহিলারাও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা গ্রাহক পরিষেবাকেন্দ্রগুলিতে ভিড় জমাচ্ছেন। টাকা না পেয়ে তাঁদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। জেলায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ১৭০টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে মল্লারপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার কর্ণধার সাধন সিংহ বলছেন, ‘‘প্রায় প্রতিদিনই ২০১৪ সালের আগে অ্যাকাউন্ট খোলা বেশ কিছু মহিলা গ্রাহক ভিড় করছেন। তাঁদের জবাবদিহি করতে গিয়ে আমাদের নাজেহাল হতে হচ্ছে।’’
২০১৪ সালের আগে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন মল্লারপুরের পাথাই গ্রামের রুবি মাল, নামো কাঁদিয়ারার রেবিনা বিবি, লাভপুরের বাসন্তী সোরেনরা। পাসবই নিয়ে তাঁরা দু’দিন গ্রাহক সেবাকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে গিয়ে খালি হাতে ঘুরে এসেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘লকডাউনে রুজি রোজগার বন্ধ। চরম কষ্টে সংসার চলছে। অথচ আমরা কোনও অনুদান পেলাম না!’’ তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আগে অ্যাকাউন্ট খুলে আমরা কি অপরাধ করেছিলাম?’’
ব্যাঙ্ক বা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে এর সদুত্তর মেলেনি। জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ঋতঙ্কর কুণ্ডু বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী জনধন প্রকল্পের অনুদান নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি বা দুর্নীতির অভিযোগ জানা নেই। যে-সব মহিলার প্রধানমন্ত্রী জনধন প্রকল্পের নির্ধারিত কোডে অ্যাকাউন্ট আছে, তাঁদেরই অনুদান পাওয়ার কথা।’’
প্রশাসনেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, কেউ কেউ অবশ্য ভবিষ্যতে আর্থিক সাহায্য মিলতে পারে সেই আন্দাজ করে পুরনো অ্যাকাউন্ট থাকা সত্ত্বেও অন্য ব্যাঙ্কে জনধন যোজনার অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ অনুদানও পাচ্ছেন। কিন্তু যাঁদের কাছাকাছি একাধিক ব্যাঙ্ক নেই বা যাঁরা অ্যাকাউন্ট খোলেননি, তাঁদের বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে। তবে যাঁদের একাধিক ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁদের টাকা ঢোকার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানিয়েছেন।
এই বিভ্রান্তির মধ্যেই উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগও। ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আওতাধীন রামনগর গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মালঞ্চা গ্রামের কল্পনা ভল্লা ও মণিকা ভল্লা। তাঁদের দাবি, ‘‘গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের আমাদের কাছে ব্যালান্স পরীক্ষা করার জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়ার পরে বলা হয় টাকা ঢোকেনি। অথচ ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমাদের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’’
কেন্দ্রের পরিচালক অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, অনেক সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে এমন হতে পারে। যদি সত্যিই টাকা বরাদ্দ হয়ে থাকে তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা ফের জমা হয়ে যাবে। একই কথা জানিয়ে ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার প্রিয়া কুমারী বলেন, ‘‘অভিযোগ তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’