Coronavirus Lockdown

ট্রাকের ডালায় ছ’টা দেহ, আর আমরা তিন

ইলাহাবাদ ঢোকার আগে, একটা জায়গায় ট্রাক থামে। তখন সন্ধ্যা ৭টা। দেহগুলো আর আমাদের আলাদা-আলাদা অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়।

Advertisement

শিবু কর্মকার (উত্তরপ্রদেশ থেকে ফেরা শ্রমিক)

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২০ ০৪:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

ছ’টা মৃতদেহের সঙ্গে ট্রাকের ভিতরে তুলে দেওয়া হল আমাদের তিন জনকে। চালকের সঙ্গে বসতে দেওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশকে পুলিশকে বার বার বলেছিলাম। কেউ শোনেনি। যেখানে যেখানে ট্রাক থেমেছে, চালককেও অনুরোধ করেছি। লাভ হয়নি। ভ্যাপসা গরমে দেহগুলো থেকে গন্ধ বেরোচ্ছিল। বমি পাচ্ছিল। ওই ভাবেই এসেছি প্রায় ১১ ঘণ্টা।

Advertisement

রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ এ ভাবেই রওনা হলাম উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে। ঔরৈয়ায় ট্রাক দুর্ঘটনায় তিন আহত—আমি, পুরুলিয়ার পাড়ার ভাঁওরিডি গ্রামের কৈলাস মাহাতো আর কোটশিলার উপরবাটরি গ্রামের গোপাল মাহাতো। সঙ্গেদু র্ঘটনায় মৃত আমাদের জেলা পুরুলিয়ার ছ’জন।

ইলাহাবাদ ঢোকার আগে, একটা জায়গায় ট্রাক থামে। তখন সন্ধ্যা ৭টা। দেহগুলো আর আমাদের আলাদা-আলাদা অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুঘলসরাইয়ের হাসপাতালে পৌঁছই। সেখানে পুরুলিয়ার লোকজনকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পাই। পুরুলিয়ার লোকজন (প্রশাসন) বেশ কয়েকটা গাড়ি নিয়ে এসেছিল। মুঘলসরাই থেকে ফিরতে আর অসুবিধা হয়নি।

Advertisement

আমার বাড়ি পুরুলিয়া মফস্সলের বোঙাবাড়ি গ্রামে। রাজস্থানের জয়পুরে কাজে গিয়ে ‘লকডাউন’-এ আটকে পড়ি। ফেরার কোনও উপায় না থাকায় পায়ে হেঁটেই রওনা হই। শুক্রবার দুপুরে আরও অনেকের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ পটনা যাওয়ার একটি মালবোঝাই ট্রাকে তুলে দেয়। শনিবার ভোরে ঘটে দুর্ঘটনা। আমার চোট বেশি ছিল না। পরিচিতদের কাছ থেকে শুনলাম, মৃতদের দেহ নিতে পুরুলিয়া থেকে লোক আসছে। হাসপাতালের লোকজনকে বলি, ‘ফিরতে চাই’।

যাদের সঙ্গে একই ট্রাকে বাড়ি ফিরব বলে উঠেছিলাম, অন্য একটা ট্রাকে তাদেরই দেহের পাশে বসে এতটা সময় এলাম। তাদেরই এক জন আমার বন্ধু গণেশ রাজোয়াড়! বাড়ি ফিরেও ঘোর কাটছে না। দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে সব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement