প্রতীকী ছবি।
শীত আসছে। ঠান্ডার প্রকোপ বৃদ্ধিতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তাই তৎপরতা শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরেও। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী কয়েক মাস করোনা পরীক্ষা আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মৃত্যুর হার কমাতে ইতিমধ্যে কো-মর্বিডিটি যুক্ত রোগীদের চিহ্নিতও করতে শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জেলার দুটি কোভিড হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। করোনা রোগীদের উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে দুই স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থ কর্মকার দফায় দফায় আলোচনা করেছেন। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ-সহ সমস্ত বিভাগের চিকিৎসক, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, এমএসভিপি ও অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে পৃথক ভাবে বৈঠক করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে জেলার কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, বিশেষ করে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রাখা রোগীদের অবস্থা জানতে প্রতিদিন দুপুরে ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছে দুই স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।
বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি জানান, বোলপুর এবং সিউড়ি এই দুই মহকুমা থেকে প্রতিধিন ১২০০ থেকে ১৩০০ করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তবে পরীক্ষা করানোর জন্য মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব খুব কম। অন্যদিকে শীতে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করণীয় তা করা হচ্ছে বলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান।
রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলাতে বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার তুলনায় দৈনন্দিন পরীক্ষার পরিমাণ অনেকটাই কম। স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে পুজোর পরে পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। সোমবার ৫০০ থেকে ৬০০ পরীক্ষা করা হয়েছে। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান জানান, শীতকালে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত নন, অথচ যাদের হার্ট, কিডনি, সুগার, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রয়েছে, সেই সব রোগীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য স্বাস্থ্য কর্মী থেকে আশা কর্মীরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বীরভূমের তুলনায় বেশি। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় ৩৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় ২৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
তবে দুই স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিকরাই দাবি করছেন, পুজোর পরে জেলায় সেই অর্থে করোনা সংক্রমণ খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় এক সপ্তাহ আগে গড়ে যেখানে ২০ থেকে ২৫টি করোনা রোগীর সন্ধান মিলেছে। সেখানে সোমবার মাত্র ৪ জন করোনা রোগীর সন্ধান মিলেছে। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় সোমবার পর্যন্ত সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১৫৪ জন। এদের মধ্যে ২০ জন করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় আড়াইশোর বেশি সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছে। এদের মধ্যে কোভিড হাসপাতালে ৩৫ জন চিকিৎসাধীন।
রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে শীতকালে করোনা রোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য কোভিড হাসপাতালে আগামী সপ্তাহের মধ্যে উন্নত পদ্ধতিতে অক্সিজেন পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। ওই পরিষেবার মাধ্যমে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ভর্তি থাকা রোগীদের আরও দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যাবে বলে দাবি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এর ফলে মৃত্যুর আশঙ্কাও কমানো যাবে বলে দাবি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।