শান্তিনিকেতন পোস্ট অফিস মোড়ে সেই পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
দলের কেন্দ্রীয় নেতা অনুপম হাজরার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি-র বোলপুর ও বীরভূম সাংগঠনিক জেলার দুই সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল ও ধ্রুব সাহা। দু’জনেই অনুপমের বিরুদ্ধে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। এ বার সেই অনুপমের বিরুদ্ধেই পোস্টার পড়ল শান্তিনিকেতনে। শুক্রবার ‘আদি বিজেপিবৃন্দ’-এর নামে দেওয়া ওই পোস্টার ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে।
পোস্টারগুলিতে অনুব্রতের সঙ্গে অনুপমের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে ‘গরু পাচার মামলায় অনুপম হাজরার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হোক’। আবার কোথাও লেখা হয়েছে ‘অনুপম হটাও, বিজেপি বাঁচাও’। কোনও পোস্টারে লেখা আছে, ‘সেটিংবাজ অনুপমকে অবিলম্বে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হোক’। অনুপমের পাল্টা দাবি, ‘‘আমি চোর-মুক্ত বিজেপির ডাক দিয়েছি। কারণ, অনেক জেলাতেই বিজেপির জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। চোর-মুক্ত বিজেপির ডাক দেওয়ায় যে চোরের সব থেকে বেশি গায়ে লেগেছে, সেই চোরই টাকা পয়সা দিয়ে এই সমস্ত পোস্টারিং করিয়েছেন।”
দীর্ঘদিন ধরেই জেলা বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। দল সূত্রের খবর, দুই সাংগঠনিক সভাপতি ধ্রুব এবং সন্ন্যাসীচরণের মধ্যেও ‘দ্বন্দ্ব’ আছে। যদিও অনুপমের বিরুদ্ধে তাঁরা এক হয়েই সুর চরাচ্ছেন। দলের একটি অংশের দাবি, বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপি-র বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের একাংশকে নিয়ে বীরভূমে নিজের মতো করে কর্মসূচি নিচ্ছেন অনুপম। বারবার তোপ দাগছেন জেলা নেতৃত্ব এবং রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীতে ক্ষোভ দানা বাঁধছে।
বুধবার বিকেলে খয়রাশোলের গোষ্ঠমাঠে অনুপমের নেতৃত্বে বিজেপির ‘বিক্ষুব্ধ’ বলে পরিচিত কর্মীদের ডাকা বিজয়া সম্মিলনী ঘিরে ধুন্ধুমার বাধে। অনুপম পৌঁছনোর আগে তাঁদের দলেরই কিছু কর্মী মঞ্চে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। অনুপম এলে তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
এমন আবহে এ বার অনুপমের বিরুদ্ধেই পোস্টার জেলা বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর ‘সংঘাতে’ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ দিনই অনুপম একটি ভিডিয়ো বার্তায় দাবি করেন, “আগামী লোকসভা নির্বাচনে বসে থাকা বিজেপির কার্যকর্তারা যাতে এক সঙ্গে লড়াই করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে আমি তাঁদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছি।’’ সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল অবশ্য বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে অনুপম যে-ভাবে রাজ্যে ও জেলা নেতৃত্বকে নিশানা করে দলবিরোধী মন্তব্য করে চলেছেন, তা অনেক বিজেপি কর্মী মেনে নিতে পারছেন না। এই পোস্টার তারই বহিঃপ্রকাশ।” তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “অনুপমের বিরুদ্ধে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। তবে, একে অপরের বিরুদ্ধে ওরা যে-ভাবে লড়ছে, তাতে আগামী দিনে জেলায় বিজেপি দলটা থাকবে কি না, সন্দেহ আছে।”