Pradhan Mantri Awas Yojana

আবাসের টাকা আটকে, শীতে কষ্টে উপভোক্তারা

বাঁকুড়ার উপপুরপ্রধান তৃণমূলের হিরন চট্টরাজ জানান, কবে বাড়ি করার কিস্তির টাকা আসবে তা জানতে রোজ পুরসভায় ভিড় করছেন মানুষজন। পুরপ্রতিনিধিরা এলাকায় প্রশ্নের মুখে পড়ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কারও বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের মুখে আটকে রয়েছে, কারও বাড়ির ভিত কাটা হয়ে কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছে। কেউ লিন্টেল ঢালাই সেরে মাসের পর মাস প্রকল্পের টাকা আসার অপেক্ষায় বসে রয়েছেন। বাঁকুড়া শহর জুড়ে হাউজ়িং ফর অল প্রকল্পে থমকে থাকা এমন বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৯০০ ছুঁই ছুঁই। কনকনে ঠান্ডায় তাঁদের অনেকে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের এই বঞ্চনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষছে বাঁকুড়া পুরসভা। যদিও এমনটা হওয়ার জন্য পুরসভার গাফিলতিকেই পাল্টা দায়ি করছে বিজেপি।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে খবর, ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে ৪৫টি, ২০১৯-’২০ তে প্রথম দফায় ২৫৩টি, ওই অর্থবর্ষের দ্বিতীয় দফায় ১৬৯টি এবং ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে ৪২৭টি বাড়ির কাজ থমকে রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে আটকে থাকা বাড়ির সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৮৯৪। এ ছাড়া ২০২১-’২২ বাঁকুড়া পুরসভায় ৩২৯ জনের বাড়ি হাউজ়িং ফর অল প্রকল্পে মঞ্জুর হয়েছে। প্রকল্পের নিয়ম মেনে তাঁদের অনেকেই পুরনো ঘর ভেঙে ভিত গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু টাকা না আসায় কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। আবার অনেকে পরিস্থিতি বুঝে ভিত কাটার কাজ এখনও শুরু করেননি।

বাঁকুড়ার উপপুরপ্রধান তৃণমূলের হিরন চট্টরাজ জানান, কবে বাড়ি করার কিস্তির টাকা আসবে তা জানতে রোজ পুরসভায় ভিড় করছেন মানুষজন। পুরপ্রতিনিধিরা এলাকায় প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। তিনি বলেন, “হাউজিং ফর অল প্রকল্পে বাঁকুড়া পুরসভার অন্তত ৯ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। ওই টাকা পেলেই দ্রুত গতিতে কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে। আমরা বারবার রাজ্য পুরসভাকে সমস্যার কথা জানাচ্ছি। কিন্তু কেন্দ্র টাকা না দিলে রাজ্য আর কী করতে পারে?’’

Advertisement

পুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদারের অভিযোগ, “কেন্দ্রের এই বিমাতৃসুলভ আচরণে সাধারণ মানুষ তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছেন। এই শীতে অনেক কষ্টে তাঁদের রাত কাটাতে হচ্ছে।” পাল্টা বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলের দাবি, “সরকারি প্রকল্পের কাজে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সমন্বয় রেখে না চলা, প্রকল্পের নিয়মনীতি না মেনে একের পর এক দুর্নীতি, পুরসভার সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারার জন্যই এই অবস্থা হয়েছে।”

এই চাপানউতোরের মধ্যে বাড়ি না পেয়ে কষ্টে রয়েছেন উপভোক্তারা। বাঁকুড়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাসুদেব লোহার বাড়ি তৈরি শুরু করলেও মাঝে কিস্তির টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘নতুন বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে পুরনো ঘর ভেঙে ফেলি। কাছাকাছি একটা চালাঘর ভাড়া করেছিলেন। নতুন বাড়ির ঢালাই পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে। অথচ দু’টি কিস্তির টাকা না পাওয়ায় জানলা-দরজা বসাতে পারিনি। প্লাস্টারও করা হয়নি। ফলে ওই বাড়িতে বাস করা যাচ্ছে না।’’ তিনি জানান, দুই ছেলে, বৌমা, স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতেই থাকতে হচ্ছে। কবে নতুন বাড়িতে ঢুকতে পারবেন জানেন না।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রোহিত দাস বলেন, ‘‘ঋণ করে বাড়ি বানিয়েছি। ভেবেছিলাম, প্রকল্পের টাকা পেলে ধার শোধ করে দেব। বেশ কয়েক কিস্তির টাকা পাইনি। কবে পাব তা-ও জানি না। বাড়িতে এখনও দরজা, জানলা লাগাতে পারিনি। শীতে ত্রিপল, চট ঢাকা দিয়ে রাত কাটাচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement