আজ ঘুরে দেখবেন সেচ কর্তারা

গন্ধেশ্বরী নদীর বুকে জাগছে আস্ত বাড়ি

প্রবাদে বলে ‘নদীর ধারে বাস, ভাবনা বারো মাস!’ কিন্তু, বাস যদি নদী-গর্ভেই হয়? হ্যাঁ, সেই তোড়জোড়ই চলছে। বাঁকুড়া শহরের গা ঘেঁষে বয়ে চলা গন্ধেশ্বরী নদীর বুকে কয়েক কাঠা জায়গা জুড়ে একটি বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০১:৩৮
Share:

এই নির্মাণ ঘিরেই বাঁকুড়ায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক।—নিজস্ব চিত্র

প্রবাদে বলে ‘নদীর ধারে বাস, ভাবনা বারো মাস!’ কিন্তু, বাস যদি নদী-গর্ভেই হয়?

Advertisement

হ্যাঁ, সেই তোড়জোড়ই চলছে। বাঁকুড়া শহরের গা ঘেঁষে বয়ে চলা গন্ধেশ্বরী নদীর বুকে কয়েক কাঠা জায়গা জুড়ে একটি বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ছোট-বড় পুকুর বা ডোবা তো বটেই— ঐতিহাসিক বাঁধও বুজিয়ে দিয়ে প্লট বানিয়ে বিক্রির অভিযোগ নতুন নয় জেলায়। তবে এ বার খাস নদীবক্ষে এমন ঘটনা দেখে চমকে গিয়েছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তিও তুলেছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাঁকুড়া পুরসভার রামানন্দ পাম্প হাউস সংলগ্ন এলাকায় মাসখানেক ধরেই ওই নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয় কাউন্সিলর ভ্রমর চৌধুরী অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘নদীর পাড়ে কিছু ইট নামানো ছিল। কিছু লোকজনকে ওই দিকে যাতায়াতও করতে দেখছি। তবে ওখানে যে বাড়ি বানানো হচ্ছে, সেটা তো জানা ছিল না।” তিনি জানাচ্ছেন, মঙ্গলবারই লোক মারফত নদীবক্ষে নির্মাণ কাজের খবর পেয়েছেন।

Advertisement

কাউন্সিলরের নজর এড়িয়ে গেলেও স্থানীয়েরা বিষয়টিতে আপত্তি তুলছেন। এঁদেরই এক জন ইতিমধ্যে কংসাবতী সেচ দফতরে অভিযোগও জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, “প্রকাশ্যে নদীতে নির্মাণ কাজ চলছে। কেউ দেখেও দেখছে না।’’ এ দিন সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে ঘটনার কথা জানতে পারেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। তিনি খবর পেয়েই কংসাবতী সেচ দফতরের আধিকারিকদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মৌমিতাদেবী বলেন, “যে জায়গাটিতে নির্মাণ কাজ হচ্ছে সেটি কারও ব্যক্তিগত নামে রয়েছে কি না তা বিএলআরওকে দেখতে বলেছি। নদীর বুকে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।” কংসাবতী সেচ দফতরের বাঁকুড়া মহকুমা আধিকারিক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় জানান, আজ বুধবার দফতরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন।

এই ঘটনায় স্থানীয়েরা প্রশ্ন তুলছেন পুরসভার ভূমিকা নিয়েও। পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত অবশ্য এই নির্মাণ কাজ রুখতে অনেক আগে থেকেই তৎপর হয়েছিলেন বলে দাবি করছেন। মহাপ্রসাদবাবু বলেন, “পুরসভার তরফে অনেক আগেই ওই নির্মাণ কাজে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুরসভার আধিকারিকেরাও সেখানে গিয়েছিলেন।”

এ দিন নির্মাণস্থলে গিয়ে কোনও শ্রমিকের দেখা মেলেনি। কারা নির্মাণ কাজে যুক্ত তা-ও জানা যায়নি। মহাপ্রসাদবাবু জানাচ্ছেন, এই নির্মাণ কাজের সঙ্গে বাঁকুড়া শহর ও বাইরের কিছু লোকজন জড়িত। ‘‘ওদের চিঠি দিয়ে পুরসভায় তলব করা হয়েছিল। কিন্তু, কেই আসেনি’’—বলছেন মহাপ্রসাদবাবু। একাধিকবার চেষ্টা করেও ওই নির্মাণ কাজের মাথাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

বস্তুত, জমির দালালদের একটা বড় চক্রের উপস্থিতি এর আগেও বারবার টের পাওয়া গিয়েছে ঐতিহাসিক পুরশহর বিষ্ণুপুরে। ছোট মাঝারি মোরাম বা মাটির টিলা থেকে মল্লরাজাদের বাঁধ— সবেতেই জমি মাফিয়ারা ভাগ বসিয়েছে বলে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণ কাজ চালানো হয়েছে ঐতিহাসিক মন্দির সংলগ্ন এলাকাতেও। শহরের বহু টিলা সমতল বানিয়ে প্লট করে বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। ঐতিহাসিক লালবাঁধ, যমুনাবাঁধও রেহাই পায়নি মাফিয়াদের হাত থেকে। যদিও এই সব দেখেও বিষ্ণুপুর পুরসভা চোখ বন্ধ করেই থেকেছে বলে সাধারণ মানুষ অভিযোগ তুলেছেন।

এ বারের ভোটে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের পরাজয়ের নেপথ্যে এই ঘটনা অনেকটা দায়ী বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও।

শহরে এর আগে একাধিকবার পুকুর বুজিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জমির দালালদের বিরুদ্ধে। তবে খাস গন্ধেশ্বরী নদীর বুকে এই নির্মাণ কাজ দালাল চক্রের বাড়বাড়ন্তের বড়সড় প্রমাণ দিল বলেই মনে করছেন পুরসভার অনেকেই। মহাপ্রসাদবাবুও বলছেন, “নদীর বুকে ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলার সাহস যে কেউ দেখাতে পারে না। এই ঘটনার পিছনে কোনও মাথা তো নিশ্চয়ই রয়েছে। প্রশাসন যা পদক্ষেপ নেওয়ার নিক। পাশাপাশি আমরাও সব দিক খতিয়ে দেখে যা করার করব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement