মৃত লালন শেখ। —ফাইল চিত্র।
বগটুই হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত লালন শেখের রামপুরহাটের সিবিআই হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআইয়ের দুই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে পলিগ্রাফ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল রামপুরহাট আদালত। বুধবার সিবিআইয়ের দুই কনস্টেবল আদালতে জানালেন, পলিগ্রাফ টেস্টে তাঁদের সম্মতি নেই।
সরকারি আইনজীবী সুরজিৎ সিংহ জানান, লালন শেখের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত সিট-এর তদন্তকারী অফিসার প্রিয়াঙ্কা মালিঠা গত ২৫ জুলাই রামপুরহাট আদালতে সিবিআইয়ের দুই কনস্টেবল ভাস্কর মণ্ডল এবং প্রেমশঙ্কর প্রসাদের পলিগ্রাফ টেস্ট করার জন্য রামপুরহাট এসিজেএম আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। আদালত সিটের তদন্তকারী আধিকারিকের করা আবেদনের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের দুই কনস্টেবলের পলিগ্রাফ টেস্ট করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে বুধবার সিবিআইয়ের দুই কনস্টেবল আদালতে পলিগ্রাফ টেস্টে সম্মতি না থাকার কথা জানিয়ে দেন। বুধবার আদালতে সিটের পক্ষে তদন্তকারী আধিকারিক প্রিয়াঙ্কা মালিঠা-সহ লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের তদন্তকারী আধিকারিক, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। সিবিআইয়ের পক্ষে আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ২০২১ মার্চ বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুনের কিছুক্ষণ পরেই ভাদু অনুগামীরা বগটুই গ্রামে বেছে বেছে দশটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ। ঘটনায় ৯ জন মহিলা সহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার ৯ মাস পরে ৩ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের পাকুড় থানার নরোত্তমপুর থেকে বগটুই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন ১২ ডিসেম্বর বিকেলে সিবিআইয়ের রামপুরহাটের অস্থায়ী শিবিরে শৌচালয়ে লালন শেখের অস্বাভাবিক মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
লালন শেখের স্ত্রী ১২ ডিসেম্বর রাতে সিবিআইয়ের আধিকারিক, কনস্টেবল সহ সাত জনের বিরুদ্ধে স্বামীকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। প্রথমে রামপুরহাট থানার পুলিশ ও পরে কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশে সিআইডি তদন্ত শুরু করে। সিআইডি তদন্ত চলাকালীন সিবিআইয়ের দুই অফিসার এবং দুই কনস্টেবলকে সাসপেণ্ড করে সিবিআইয়ের বিভাগীয় দফতর। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১ মে কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিটকে লালন শেখের অপমৃত্যুর তদন্তভার দেওয়া হয়। সিটের আবেদনের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের দুই কনস্টেবলের পলিগ্রাফ টেস্টের নির্দেশ দেয় আদালত।
বগটুই হত্যাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত জেলা হেফাজতে থাকা আনারুল হোসেনের পলিগ্রাফ পরীক্ষা নিয়েও টানাপড়েন চলেছিল। রামপুরহাট আদালতে আনারুলের আইনজীবী জানান বিচারককে জানিয়েছিলেন, যাঁর পলিগ্রাফ টেস্ট হবে সেই আনারুলকে পলিগ্রাফ পরীক্ষার দায়িত্ব সিবিআই ভাল করে বুঝিয়ে দিক। তার পরে সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের অপমৃত্যুর ঘটনায় বিতর্ক বাধে। আনারুল হোসেনের পলিগ্রাফ টেস্টের বিষয়টি এখন বিচারাধীন রয়েছে।