Crime

চিকিৎসক খুনে নলহাটির কংগ্রেস নেতা গ্রেফতার

প্রসঙ্গত, চলতি বছর ২৪ এপ্রিল নলহাটিতে নিজের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়  অশীতিপর চিকিৎসক মদন লালচৌধুরীর হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত মৃতদেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নলহাটি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩ ০৯:৫১
Share:

রামপুরহাট সব্যসাচী ইসলাম। নলহাটির কংগ্রেস নেতা নরুল মুর্তোজা ওরফে রাজেশ কে কোর্টে তোলা হচ্ছে।

নলহাটির চিকিৎসক খুনে রবিবার গভীর রাতে গ্রেফতার করা হল শহর কংগ্রেসের সভাপতি মহম্মদ নুরুল মুর্তজা ওরফে রাজেশ শেখকে। সোমবার তাঁকে রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। এই গ্রেফতারি ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কংগ্রেসের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোট মিটতেই রাজনৈতিক কারণে রাজেশকে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে। রাজেশ নিজেও সেই অভিযোগ করেছেন। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, চলতি বছর ২৪ এপ্রিল নলহাটিতে নিজের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় অশীতিপর চিকিৎসক মদন লালচৌধুরীর হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত মৃতদেহ। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নুরুল মুর্তজা ওরফে রাজেশকে নিয়ে মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নলহাটি ১ ব্লকের কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাজেশ শিক্ষকতা করেন। এর আগে এক সোনার দোকানের মালিক-সহ পাঁচ জনকে পুলিশ ধরেছিল। তাঁরা এখন জেল হেফাজতে।

তবে, রাজেশের গ্রেফতারির ধরন বেশ নাটকীয়। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে নলহাটি থানা এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। শনিবার নলহাটিতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে এসে বড়লা ও কুশমোড় ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েক জন বিরোধী প্রার্থী (কংগ্রেস সহ) তৃণমূলে যোগদান করেন। এর ফলে ওই দু’টি পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে আসে। এঁদের মধ্যে বড়ালের দু’জন কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী ছিলেন। এর পরেই মুরারই ২ ব্লকের জাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম এবং কংগ্রেসের সাত জন জয়ী প্রার্থীকে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যান কংগ্রেস নেতৃত্ব।

Advertisement

কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, রবিবার বিকেলে নলহাটি শহরে একটি অনুষ্ঠান ভবনে নলহাটি ১ ব্লকে কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করে জেলা কংগ্রেস। সেই বৈঠকে বড়লা পঞ্চায়েতের দুই কংগ্রেস প্রার্থীকে দলে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজেশকে। এই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরেই চিকিৎসক খুনে পুলিশ গ্রেফতার করে রাজেশকে।

এই ঘটনায় কংগ্রেস নেতৃত্ব রাজেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদের অভিযোগ, ‘‘রাজেশকে বড়লা পঞ্চায়েতের দু’জন দলত্যাগী কংগ্রেস সদস্যকে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো রাজেশ কাজ শুরু করেছিলেন। এই খবর জেনে তৃণমূল পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে মিথ্যা মামলায় রাজেশকে ফাঁসিয়েছে।’’ রাজেশও এ দিন রামপুরহাট আদালতে দাবি করেন, ‘‘আমি এই খুনের সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নই। মিথ্যা মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আইন ও আদালতের উপরে আস্থা আছে। মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হবে। পুলিশ ও শাসকদল চক্রান্ত করে আমাকে গ্রেফতার করিয়েছে।’’

যদিও এই খুনের মামলায় রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে বিবৃতি দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলছে। তৃণমূলের অনেক কর্মীও বিভিন্ন মামলায় জেলে আছেন। কংগ্রেস নেতা খুনের মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় লজ্জা থেকে বাঁচতে ওরা রাজনীতির রং লাগাচ্ছে।’’

নলহাটি শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে শহরে জমি মাফিয়ারা জাঁকিয়ে বসেছে। এ নিয়ে থানায় অনেক অভিযোগ জমা পড়ছিল। মৃত চিকিৎসকের ছেলে মলয় চৌধুরীও বাবার মৃত্যুর জন্য জমি মাফিয়াদের দায়ী করেছিলেন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘শুধু রাজেশ শেখ নন, এই খুনের পিছনে বহু নেতার ষড়যন্ত্র রয়েছে। তাঁদেরও গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’’ রামপুরহাট আদালতের সরকারি আইনজীবী সুরজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘অভিযুক্তকে বিচারক চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।’’ কংগ্রেসের অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। এর থেকে বেশি কোনও তথ্য দেওয়া যাবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement