সমাজমাধ্যমে ভাইরাল বিজেপি নেতার সঙ্গে শুভ্রাংশু চৌধুরীর ছবি। newspapai372@gmail.com
তৃণমূল নেতার মনোনীত প্রার্থীদের ‘প্রতীক’ দিয়েছেন বিজেপি জেলা নেতৃত্ব। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিকে ঘিরে এমন চর্চাই জোরালো হয়েছে মহম্মদবাজারের গণপুরে। সেই ছবিটির সত্যতা যাচাই করেনি আন্দবাজার পত্রিকা।
তবে, ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি গেরুয়া পর্দা লাগানো ঘরে বসে রয়েছেন মহম্মদবাজারের তৃণমূল নেতা শুভ্রাংশ চৌধুরী। তাঁর ডান দিকে বসে বিজেপি-র বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক টুটুন নন্দী। পিছনে মহম্মদবাজার বি মণ্ডলের সভাপতি পিনাকী মণ্ডল। শুভ্রাংশুর সামনে কেউ বসে। তাঁর বাঁ হাত এবং হাতে ধরা একগুচ্ছ কাগজ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।
বিজেপি নেতাকর্মীদের একাংশের দাবি, ছবিটি ১৭ জুন সিউড়ি বিজেপি জেলা কার্যালয়ে তোলা। শুভ্রাংশু এখন আর বিজেপিতে নেই। বিধানসভা নির্বাচনের পরেই তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, বিজেপির জেলা নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে ১৭ তারিখ শুভ্রাংশু-র ‘গোপন’ বৈঠক হয়েছিল তাঁর মনোনীত প্রার্থীদের বিজেপির প্রতীক পাওয়ার বিষয়ে বলে দাবি বিজেপির ওই অংশের।
মহম্মদবাজার বি মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক আমিত হাজরা বলেন, ‘‘শুভ্রাংশু চৌধুরী শাসকদলে চলে যাওয়ার পর থেকে থেকে গণপুর এলাকায় সংগঠন তৈরি করা থেকে শুরু করে এ বার ভোটে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯টি এবং মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির ২টি আসনে প্রার্থী বাছাই, সবটাই করেছিলাম। কিন্তু, ১৭ তারিখ সিউড়ি দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীদের জন্য প্রতীক আনতে গিয়ে দেখি, ওই তৃণমূল নেতা সেখানে বসে।’’ অমিতের দাবি, দলের তরফে জানানো হয়, বিজেপির প্রতীক পাবেন শুভ্রাংশ মনোনীত প্রার্থীদের পাঁচ জন। অমিতের কথায়, ‘‘দলের এই সিদ্ধান্ত হতাশ করেছে আমাকে এবং সাধারণ কর্মীদের।’’
শুভ্রাংশু অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি বিজেপিতে থাকাকালীন জেলা কার্যালয় তৈরি হয়েছিল। ছবিটি কবে তোলা আগে, সেটা যাচাই হওয়া প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি প্রতীক নিয়ে কী দাবি করেছি না করেছি, সেটা বিজেপি জেলা নেতৃত্ব বলতে পারবেন।’’ বিজেপির মহম্মদবাজার বি মণ্ডলের সভাপতি পিনাকী মণ্ডলও ছবিটিকে পুরোনো বলে দাবি করেছেন। ছবির প্রসঙ্গ এড়িয়ে বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘তিনি(শুভ্রাংশু) কোন দলে আছেন, সেটা তিনিই বলবেন। তবে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি বিজেপির হয়ে পরিশ্রম করছেন। দলের প্রতীক শুভ্রাংশুকে নয়, দেওয়া হয়েছে ওই এলাকার যোগ্যতম প্রার্থীকে।’’
প্রসঙ্গত, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণপুর দখল করেছিল বিজেপি। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করা শুভ্রাংশ। কিন্তু, বিধানসভা নির্বাচনের পর ফের বিজেপির সঙ্গে যোগ কমতে থাকে শুভ্রাংশুর। গত বছর তিনি অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরে ফের পুরোনো দলে ফেরেন। তার পরেই মহম্মদবাজার ব্লক সভাপতি তাপস সিংহকে সরিয়ে শুভ্রাংশুকে ব্লক সভাপতি করে দেওয়া হয়।
তবে বেশি দিন ব্লক সভাপতি পদে ছিলেন না। গত ডিসেম্বরে দায়িত্ব কমিয়ে তাঁকে এবং কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্লকের ৬টি করে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার যুগ্ম আহ্বায়ক করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে দল সেই পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেয়। তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘সে-ভাবে কাজ করেছিলেন না বলে পদ থেকে ওঁকে আগেই সরানো হয়েছিল। তবে, তিনি দল ছেড়েছেন বলে শুনিনি।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ বাড়িয়েছেন শুভ্রাংশু। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দলের অন্দরে। তার জেরেই এই ছবি ছড়িয়েছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে বিজেপির অন্দরে।