প্রতীকী ছবি।
বাজেট-বক্তৃতা শুনে হতাশা প্রকাশ করলেন দুই জেলার বিরোধী দলের নেতারা। তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের এক সুরে প্রশ্ন— থমকে যাওয়া অর্থনীতির চাকাকে ঘোরানোর মতো ঘোষণা কই বাজেটে? সাধারণ বিষয় বা রেল পরিষেবায় দুই জেলার প্রাপ্তি কী? যদিও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, পানীয় জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় এই দুই ক্ষেত্রে সমস্যা সব থেকে বেশি। তাই কেন্দ্রীয় সরকার রাঢ়বঙ্গের উন্নয়নেও সচেষ্ট বলে পাল্টা দাবি করেছেন বিজেপির জেলা নেতারা।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া বলেন, ‘‘দিশাহীন বাজেট। দেশে আর্থিক মন্দা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। গত ৪৫ বছরের মধ্যে বেকারত্ব সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। গ্রামীণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এই সমস্যাগুলি থেকে বেরোনোর কোনও দিশা নেই বাজেটে।”
বাজেটে বিজেপি সরকার জেলায় পিপিপি মডেলে মেডিক্যাল কলেজ গড়তে চাইছে। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করেছেন। এই প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো দাবি করেন, ‘‘পিপিপি মডেলে হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হলে সেখানে গরিবেরা নিখরচায় চিকিৎসা পাবেন না। বিজেপি সর্বত্রই বেসরকারিকরণ করতে চাইছে। বাজেটে সাধারণ মানুষের কোনও প্রত্যাশাই পূরণ হয়নি।”
পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নে বিজেপির অর্থমন্ত্রী বাজেটে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘প্রান্তিক লোকজনের হাতে টাকা আসবে কোথা থেকে, তার কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা বাজেটে নেই। বরং কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রীর দীর্ঘ ভাষণে আছে কথার মারপ্যাঁচ।’’
বাজেট নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বাঁকুড়ার বিরোধী নেতারাও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, ‘‘বাজেটে বক্তৃতা দীর্ঘ, কিন্তু বিষয়বস্তু শূন্য। বেকারদের চাকরির দিশা, মূল্যবৃদ্ধি রোধ, মানুষের হাতে বাড়তি টাকার জোগানের উদ্দেশে পদক্ষেপ কিছু নেই। উল্টে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে এক ধাপ এগোল। রাজ্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা কোতুলপুরের তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল সাঁতরার দাবি, ‘‘দেশের অর্থনীতি ঝিমোচ্ছে। এই বাজেটে দেশের অর্থনীতিকে আইসিইউ-তে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হল।’’
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘পানীয় জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে ঘোষণা করা হয়েছে। আয়করেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। সব শ্রেমির মানুষই খুশি।’’
জনজাতি ও তফসিলি সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘ওই অর্থ জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়ন ঘটাবে।”
একই সুরে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার দাবি করেছেন, ‘‘কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি এতে চাঙ্গা হবে। নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে প্রচুর। স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা সবেতেই উন্নয়নের দিশা রয়েছে বাজেটে। মধ্যবিত্তের হাতে টাকার জোগান বাড়বে। এতে বাজারে গতি আসবে।’’