সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি দুই তৃণমূল কর্মী। —নিজস্ব চিত্র
গুলি নয়, লাভপুরের ঠিবায় আহত সিপিএম কর্মীর শরীরে মিলল বোমার স্প্লিন্টারের ক্ষত। শুক্রবার বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। এ দিনই লাভপুর থানায় গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন তাঁর স্ত্রী। পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্তের স্ত্রী-ও।
বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটে নাগাদ সুফল বাগদি নামে এক সিপিএম কর্মীকে মোটরবাইকের ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে অষ্টম হাজরা নামে এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনাকে দু’দলের বিবাদ হয়। শুক্রবার লাভপুর থানায় সুফলের স্ত্রী সুচিত্রা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুকান্ত পাল-সহ পনেরো জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে সুচিত্রা জানিয়েছেন, সুফল বাড়ি লাগোয়া পুকুর থেকে স্নান করে ফিরছিল। সেই সময়ে অষ্টম তাঁকে মোটরবাইকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। প্রতিবাদ করলে মারধর করে। ‘পরে দেখে নেব’ বলে শাসায়ও।
এ দিন সুচিত্রা অভিযোগ করেন, ‘‘ওই ঘটনার কিছু পরেই তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুকান্ত পালের নেতৃত্বে এক দল তৃণমূল কর্মী আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। আমার স্বামীকে টেনে-হিঁচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে গুলি চালায়, বোমাও ছোড়ে।’’ গুরুতর জখম সুকান্তকে প্রথমে লাভপুর, পরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ দিনও হাসপাতালে ভর্তি তিনি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বোমার স্প্লিন্টারের চোট রয়েছে সুকান্তের শরীরে। হাতের চোট গুরুতর। আজ, শনিবার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা।
যদিও মারধর, বোমা ছোড়ার অভিযোগ মানতে চাননি স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। তাঁদের দাবি, ‘‘আক্রান্ত আসলে দলীয় কর্মীরাই।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, সুকান্ত-সহ আরও তিন জন সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি। সুকান্তের কলারবোনে আঘাত রয়েছে। শুক্রবার হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে তিনি দাবি করেন, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। নিতান্তই গ্রাম্য বিবাদ। আসলে ওই ঝামেলার খবর পেয়ে আমি উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মিটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সিপিএমের লোকেরাই আমাদের উপরে চড়াও হয়।’’
এ দিনই পনেরো জনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন সুকান্তের স্ত্রী শিখা। সে অভিযোগ আবার মানতে চাননি সিপিএম নেতারা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘সন্ত্রাস কায়েম করতেই তৃণমূলের লোকেরা বোমা-বন্দুক নিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে চড়াও হচ্ছে। ঠিবার ঘটনা তার ব্যতিক্রম নয়।’’ প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে বার বার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উভয়পক্ষের মোট তিরিশ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে।