মঙ্গলবার ভোরেও বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের আঙারিয়া গ্রামে আলুখেতে ঘুরছে হাতি। ছবি: শুভ্র মিত্র।
রূপনারায়ণ ডিভিশন থেকে পাঞ্চেত ডিভিশনে ঢুকলে বরাবর নির্দিষ্ট একটি পথে যাতায়াত করে হাতির দল। তবে এ বারে বদলে গেলে তাদের মতিগতি। চারটি দলে ভাগ হয়ে পুরোপুরি অন্য পথে সোমবার রাতভর দাপিয়ে বেড়ালো ৫৩টি হাতি। হাতিদের দাপটে তছনছ হয়েছে বাঁকুড়ার জয়পুর রেঞ্জের জগন্নাথপুর পঞ্চায়েতের আঙারিয়া, মুড়ারডাঙা এলাকার বিঘার পর বিঘা জমির আনাজ, জানাচ্ছেন চাষিরা।
এ দিন সকালে জমিতে গিয়ে অবাক বনে যান ওই সব এলাকার আলু চাষি উত্তম বাগদী, আনন্দ মান্না, সাগরমোহন লাহা, মহসিন মণ্ডলেরা। সাজানো খেত এক রাতে তছনছ হয়েছে। কারও দু’দিন আগে তৈরি আলুখেত মাড়িয়ে শেষ করেছে তো কারও পুষ্ট আলু নষ্ট হয়েছে। শিম, বরবটির মাচাও গুঁড়িয়ে গিয়েছে। আঙারিয়ার বাসিন্দা খলিউল্লা মণ্ডল জানান, এলাকায় এই প্রথম হাতি ঢুকল। মনে হয়, অন্য দিকে বাধা পেয়ে হাতির দল এ দিকে এসে পড়েছে। তাঁর আক্ষেপ, “মহাজনের কাছে ধার করে আলু লাগিয়েছিলাম। হাতির হানায় সব চলে গেল। বন দফতর যা ক্ষতিপূরণ দেবে, তাতে লাভ বিশেষ হবে না। এলাকার কয়েকশো চাষির অন্তত দেড়শো বিঘার আলু নষ্ট হয়েছে।”
আঙারিয়ার কাটাবনি এলাকার আলু চাষি মানিক মণ্ডল জানান, ভোর ৩টের সময়ে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে হাতিরা আলুখেত নষ্ট করে। হাতি জয়পুরে এসেছে শুনেছিলেন। তবে এ দিকে চলে আসবে, ভাবেননি। হাতিতে ভেঙে দেওয়া শিমের মাচা মেরামত করতে করতে মুড়ারডাঙার চাষি সুকুরালি মল্লিক বলেন, “নিজের জমি নয়। ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৯ কাঠায় শিম লাগিয়েছিলাম। দু-এক দিনের মধ্যেই ফসল তোলার কথা ছিল। শেষরক্ষা হল না।” তিনি আরও জানান, সোমবার রাত ২টো থেকে সাড়ে ৩টে পর্যন্ত জমিতে ছিল হাতির দল। বন দফতর ক্ষতিপূরণ দিলে ভাল হয়। এলাকার বেশির ভাগ চাষির দাবি, জঙ্গলে খাবার না পেয়ে হাতির দল জমিতে নেমে পড়ছে। ক্ষতি ঠেকাতে বন দফতরের আরও সক্রিয় হোক।
হাতির দাপটের কথা মেনে পাঞ্চেত বন বিভাগের এডিএফও বীরেন কুমার শর্মা জানান, এ বার হাতির দলটি পরিচিত পথে যায়নি। জঙ্গলপথ ছেড়ে খেত হয়ে ঢুকেছে। আধকাটার জঙ্গলের বাঁ দিকে আগুনকুমারী, খড়কাটা ও ডান দিকে বালিবিল, মাধবপুর, খড়িকাশুলি এলাকাগুলি ‘নন-ফরেস্ট জ়োন’। জঙ্গলপথে হাতির দলকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও কৃষিজমিতে মুশকিল। তিনি বলেন, “শেষ পাওয়া খবরে হাতির দল জিয়াবাঁদির ছোট একটা জঙ্গলে আছে। সেখান থেকে হুলমারা, বাসুদেবপুর, গোঁসাইপুর হয়ে নদী পার করে বাঁকুড়া (উত্তর) বনবিভাগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণেরব্যবস্থা করা হবে।”