সিউড়ির হাটজনবাজারের নির্মীয়মান উড়াল পথের পাশের সংকীর্ণ রাস্তা নিয়ে অভিযোগ এলাকা বাসীর। নিজস্ব চিত্র।
আবারও জটিলতা হাটজনবাজারে নির্মীয়মান রেল উড়ালপথ নিয়ে। উড়ালপথটি নকশা মেনে তৈরি হচ্ছে না। এমনই দাবি স্থানীয়দের। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তার মাঝ বরাবর তৈরি হওয়ার পরিবর্তে রাস্তার ধার ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে উড়ালপথ। এর ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে উড়ালপথের পাশে থাকা বাড়ির বাসিন্দা ও দোকানের মালিকদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়ির সামনে রাস্তা এতই ছোট হয়ে গিয়েছে যে সেখানে কোনও বড় গাড়ি এমনকি টোটোও ঢুকতেও সমস্যা হচ্ছে।
মঙ্গলবার তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়ে সিউড়ির মহকুমাশাসক এবং রেল কর্তৃপক্ষকে একটি স্মারকলিপি জমা দিল হাটজনবাজারের প্রায় একশোটি পরিবার। বিষয়টি জমি অধিগ্রহণ দফতর খতিয়ে দেখছে বলে জানান সিউড়ির মহকুমাশাসক।
২০১৮ সালে হাটজনবাজার এলাকায় রেলগেটের পরিবর্তে রেল উড়ালপথ তৈরির ঘোষণা করা হয়। তখন প্রশাসনের তরফ থেকে উড়ালপথ এবং সংলগ্ন রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করা হয় । রাস্তার দু’ধারে জমি অধিগ্রহণের সময় উড়ালপথ কেমন হবে, তার একটি নকশাও দেখান হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তখন দেখানো নকশা অনুযায়ী, সিউড়ি-বোলপুর রাস্তার মাঝ বরাবর উড়ালপথটি তৈরি হওয়ার কথা ছিল। রাস্তার দু’দিকে থাকা বাড়িগুলির থেকে প্রায় ১৫-২০ ফুটের ব্যবধান থাকারও কথা ছিল। কিন্তু উড়ালপথের কাজ শুরু হতেই তাঁরা দেখেন সিউড়ি থেকে বোলপুর যাওয়ার লেনের বাঁ দিকে অনেকটাই সরে এসেছে উড়ালপথের কাঠামো।
সেই সময়েই জেলাশাসকের কাছে সমস্যার কথা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। ফলে, তাঁদের সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা এগোয়নি।
কিন্তু সমস্ত জট কেটে উড়ালপথের কাজ আবার শুরু হতেই আবারও নিজেদের সমস্যা নিয়ে সরব হলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, ওই এলাকায় প্রায় ৫০-৬০টি এমন বাড়ি ও দোকান রয়েছে, যেখান থেকে উড়ালপথের দূরত্ব মাত্র ছ’ফুট। সেই ছ’ফুট রাস্তার মধ্যেই রয়েছে পাকা নর্দমা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, উড়ালপথের ঠিকাদার তাঁদের জানিয়েছিলেন, উড়ালপথের যে কাজ বাকি আছে, তার জন্য আরও প্রায় তিন ফুট রাস্তা নিয়ে নেওয়া হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জীবন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাড়ির সামনের ওই তিন ফুট রাস্তায় মোটরবাইকও ভাল ভাবে ঢুকবে না। কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্স বা আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকারও জায়গা নেই।” পাশাপাশি, উড়ালপথে লাগাতার যান চলাচল করলে কম্পনে বাড়িগুলিতে ফাটল ধরার আশঙ্কা করছেন তাঁর। তিনি বলেন, “আমরা চাই উড়ালপথ হোক, প্রয়োজনে আমাদের জমি অধিগ্রহণ করা হলেও কোনও আপত্তি নেই। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।” আর এক বাসিন্দা বেলা সেনের দাবি, “আমরা জমি দিতে রাজি আছি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে শুধু জমি নয়, বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। না হলে আমাদের পক্ষে অন্যত্র থাকাও সম্ভব নয়।”
মহকুমাশাসক সুপ্রতীক সিংহ বলেন, “বিষয়টি জমি অধিগ্রহণ বিভাগকে জানিয়েছি। ওই এলাকায় কী পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল, যতটা জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল, ততটা অধিগ্রহণ হয়েছে কি না, যে বাড়িগুলি ভাঙা উচিত ছিল সেগুলি ভাঙা হয়েছে কি না-—এগুলি দেখার দরকার আছে। অধিগ্রহণ দফতরের রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। তত দিন পর্যন্ত আমরা রেলকে একটু ধীরে চলার কথা বলেছি। আমরা উন্নয়নকেও পিছিয়ে রাখতে পারি না আবার জনগণের অসুবিধাকেও বাদ দিতে পারি না। মাঝের রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করছি।”
যদিও রেলের এক কর্তা জানান, আগের নকশা মেনেই কাজ হচ্ছে। কোনও পরিবর্তন হয়নি। প্রয়োজনে এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হবে।