—প্রতীকী ছবি।
সন্তান প্রসবের কয়েক ঘণ্টা পরে মৃত্যু হল মায়ের। শনিবার সিউড়ি সদর হাসপাতালের এই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন মৃতার পরিবার।
হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্টের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে পরিবার। মৌমিতা সাহা গড়াই (২৬) নামে ওই যুবতীর মৃত্যুতে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং সদ্যোজাতের দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। পাশাপাশি সিউড়ি থানাতেও অভিযোগ জানিয়ে দেহের ময়নাতদন্তেরও দাবি জানানো হয়। গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতাল সুপার নীলাঞ্জন মণ্ডলের দাবি, চিকিৎসার সমস্ত পদ্ধতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেখানে কোনও ভুল ধরা পড়েনি। সুপার বলেন, ‘‘পরিবারের দাবি মেনে ময়নাতদন্ত করা হবে৷ সেই রিপোর্ট পেলেই সমস্ত বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়া থানার হরপলশা গ্রামের বাসিন্দা মৌমিতাকে শুক্রবার রক্তপাত ও খিঁচুনির সমস্যা নিয়ে সাঁইথিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল৷ সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ সমস্ত সমস্যা খতিয়ে দেখে শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ অস্ত্রোপচার (সিজার) করার সিদ্ধান্ত নেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। অস্ত্রোপচারের পরে পুত্রসন্তান প্রসব করেন মৌমিতা৷ সিজারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বন্ধ্যাত্বকরণও করানো হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
পরিবারের দাবি, অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এসে মৌমিতা প্রাথমিক ভাবে সুস্থ থাকলেও কিছুক্ষণ পর থেকেই তাঁর খিঁচুনি, রক্তপাত ও বমি শুরু হয়। বিষয়টি চিকিৎসককে জানানো হলে তিনি মৌমিতাকে পরীক্ষা করেন। শনিবার ভোর চারটে নাগাদ দ্বিতীয় বার মৌমিতাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ তাঁরা জানতে পারেন মৌমিতার মৃত্যু হয়েছে।
এর পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন পরিবারের সদস্যরা। মৌমিতার দাদা সুকুমার গড়াই, ননদ মিতু গড়াই বলেন, “আমাদের স্থির বিশ্বাস, চিকিৎসার গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে মৌমিতার। সিজার হওয়া পর্যন্ত কোনও সমস্যা ছিল না, লাইগেশনের সময়েই নিশ্চয়ই কোনও ভুল হয়েছে। আমরা চাই ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সদ্যোজাত শিশুর পরবর্তী জীবনের দায়িত্বও নিন ওই চিকিৎসক।”
সিউড়ি সদর হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জন মণ্ডল বলেন, “মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই আমরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। তবে, প্রাথমিক ভাবে আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি, তাতে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা নার্সদের কোনও দোষ ছিল না। তাঁরা সব রকম চেষ্টা করেছেন।’’ সুপারের দাবি, মৃতার হৃদস্পন্দন বেশি ছিল এবং রক্তচাপ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পরে রক্তক্ষরণ কেন হচ্ছে, তা বুঝতে দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু, সব রকম চেষ্টার পরেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।