বাড়ির টাকা আটকে থাকায় পুরভবনে বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র
‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পের উপভোক্তাদের এই দুর্ভোগে কেন পড়তে হচ্ছে, তা নিয়ে তরজা চলছে তৃণমূল ও বিরোধীদের মধ্যে। বিরোধীরা এ জন্য তৃণমূল পরিচালিত রঘুনাথপুর পুরসভার বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগও তুলেছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করতে এক জন উপভোক্তাকে মোট ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা দেয় পুরসভা। এর বাইরে ২৫ হাজার টাকা দিতে হয় উপভোক্তাকে। অর্থাৎ একটি বাড়ি তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে মোট তিন ৬৮ হাজার টাকা।
সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত রঘুনাথপুর পুরসভায় তিন পর্যায়ে মোট ১৬৩৬টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলেছে। প্রথম পর্যায়ে ৪৮৬টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪০০টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৭৫০টি বাড়ি তৈরির কথা। সূত্রের খবর, বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ের বাড়ি তৈরির দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রথম পর্যায়েরই ৭৪টি বাড়ি সম্পূর্ণ হয়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রথম পর্যায়ের তালিকাভুক্ত উপভোক্তাদের সবাইকে টাকা দিতে পারেনি পুরসভা। অনেকে আবার টাকা নিয়েও বাড়ি করেননি। প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার পরে বাকি তিন কিস্তির টাকা দিতে পুরসভা এক-দেড় বছর সময় নিচ্ছে। সে কারণে বাড়ি তৈরি করতে পারছেন না বহু উপভোক্তা।
বিরোধীদের দাবি, শহরে যত অসম্পূর্ণ বাড়ি আছে, তার বেশিরভাগই দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকাভূক্ত। পুরসভার বিগত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে রাজ্য সরকার পুরপ্রশাসক নিয়োগ করেছিল। কংগ্রেসের শহর সভাপতি তারকনাথ পরামানিকের অভিযোগ, ‘‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট ভাবে খবর আছে, সে সময় এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকার একাংশ ‘ফান্ড ডাইভারশন’ করে অন্য খাতে খরচ করে পুরসভা। সে কারণেই দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রচুর উপভোক্তা প্রথম বা দ্বিতীয় কিস্তির পরে বাকি টাকা না পেয়ে বাড়ি শেষ করতে পারছেন না।’’ যদিও পুরসভার এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী গোপীনাথ মাজির দাবি, ‘‘দ্বিতীয় পর্যায়ের বেশির ভাগ উপভোক্তাই তিন লক্ষ করে টাকা পেয়েছেন। বাড়ি সম্পূর্ণ করলে বাকি টাকাও দেওয়া হবে।’’
উপভোক্তা নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির পুরপ্রতিনিধি দীনেশ শুক্লা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অনুমোদিত ১,৬৩৬টি উপভোক্তার মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ স্বচ্ছল। তাঁরা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য নয়। তাঁরা তৃণমূলের নেতা, পুরপ্রতিনিধিদের কাটমানি দিয়ে কিস্তির টাকা পেয়েছেন। আর গরিব উপভোক্তারা কাটমানি দিতে না পারায় বকেয়া কিস্তির টাকা পাচ্ছেন না।’’ বাড়ি তৈরির কিস্তির টাকা ছাড়ার জন্য তৃণমূল নেতা, পুরপ্রতিনিধিদের একাংশ টাকা চাইছেন বলে অভিযোগ তুলে কয়েকমাস আগে পুরভবনে বিক্ষোভ দেখায় তফিসিলি জাতি বাউড়ি সমাজ কল্যাণ সমিতি-ও।
বিজেপির পুরপ্রতিনিধি দীনেশের দাবি, পঞ্চায়েত এলাকার এক বাসিন্দাও শহরের এই প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন। ওই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পুরসভার কর্মী গোপীনাথ মাজির পরিবারের কয়েকজনের নামও ওই প্রকল্পের তালিকায় ছিল।
তবে গোপীনাথের দাবি, ‘‘কোনও রকম দুর্নীতি হয়নি। ভুল করে পরিবারের কয়েকজনের নাম তালিকায় উঠেছিল। পরে বাদ দেওয়া হয়েছে।’’ পুরপ্রধান তৃণমূলের তরণী বাউড়ির দাবি, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অভিযোগ করছেন বিরোধীর। হাউস ফর অল প্রকল্পে স্বচ্ছতার সঙ্গেই কাজ হচ্ছে।’’
তবে পাঁচ কিস্তিতে টাকা দেওয়ায় বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ‘বাস্তব সমস্যা’ রয়েছে বলে মানছেন শাসকদলেরই পুরপ্রতিনিধিদের একাংশ। তাঁদের মতে, যাঁদের বাড়ি তৈরি করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন, সেই উপভোক্তাদের চিহ্নিত করে দুই কিস্তিতেই সমস্ত টাকা দিয়ে দিলে এই সমস্যা হত না।
তৃণমূলেরই পুরপ্রতিনিধি প্রণব দেওঘরিয়া বলেন, ‘‘অনেকেই বাড়ি ভাঙার পরে সমস্যায় পড়েছেন। বোর্ড অব কাউন্সিলরের সভায় পাঁচ কিস্তিতে টাকা দেওয়ার নিয়মের বদলের প্রস্তাব রাখব।’’ (শেষ)