পায়েস রান্না চলছে। নিজস্ব চিত্র।
কারবালার শহিদদের স্মরণ করলেন আবাদ মোল্লা, সুনীলকুমার পাল, সোহিনী পাল, রিজিয়া খাতুনেরা। ধর্মের ভেদাভেদ নয়, মহরম উপলক্ষে সম্প্রীতির বাঁধন আরও কিছুটা পোক্ত হল ইন্দাসের চকসাপুর গ্রামে। বরাবরের মতো এ বারও মহরমের দিন তিনেক আগে, শনিবার গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ উপবাস করে বুড়ো পীরতলার মাজারে প্রার্থনা জানালেন। তারপরে সবাই মিলে পাত পেড়ে খেলেন পায়েস। বাঁকুড়া জেলা ইমাম পরিষদের সম্পাদক সরিফুল ইসলামের কথায়, ‘‘মহরমের রীতি হল উপবাস করে প্রার্থনা জানানো ও সন্ধ্যায় দুঃস্থদের খাবার বিলি করে নিজেদের খাবার খাওয়া। সব ধর্মের মানুষকেই এতে ডাকা যেতে পারে। চকসাপুরের মতো সম্প্রীতির নজির যত তৈরি হবে, সমাজের পক্ষে ভাল।’’
মহরমের কয়েকদিন আগে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরুল পঞ্চায়েতের চকসাপুর গ্রামের মানুষের সঙ্গে মেতে ওঠেন আশপাশের বনপুকুর, বাঘমারি-সহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা।
এ দিনের অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পাল পরিবারের বর্ষীয়ান সদস্য সুনীলকুমার পাল বলেন ‘‘কারবালার শহিদদের সবাই স্মরণ করি। ধুনো পোড়ানো হয়। সবাই মিলে এক সঙ্গে পায়েস রান্না করে খাওয়া হয়। এটাই দীর্ঘদিনের রীতি।’’
এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বুড়ো পীরবাবার মাজারে যখন প্রার্থনার আয়োজন চলছে, তখন পাশের হরিমন্দিরে পায়েসের জন্য কেউ টাকা, কেউ চাল, কেউ বা দুধ দিতে আসছেন। পায়েস তৈরিতে বর্ষীয়ান আবাদ-সুনীলের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের উজ্জ্বল মণ্ডল, শেখ মনিরুল, কৌশিক পালেরা। বাসিন্দারা জানান, এখানে মহরমের দিন তাজিয়া বের করার চল নেই। গ্রামের প্রৌঢ়া রূপালি পালের কথায় ‘‘পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই আমরা এ ভাবেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মিলিত হয়ে আছি, আগামী দিনেও থাকব।’’
পাত্রসায়রের কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক প্রকাশ সরকার বলেন, ‘‘সম্রাট আকবর হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপন করে সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করতে ‘সুল-ই-কুল’ বা ধর্ম-সহিষ্ণুতার নীতি প্রচলন করেছিলেন। যেন তারই এক দৃষ্টান্ত চকসাপুর।’’