পুরুলিয়া থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে শ্যাম স্টিলের কারখানার উদ্বোধন করলেন মমতা। রঘুনাথপুরে উপস্থিত মন্ত্রী শশী পাঁজা। ছবি: সঙ্গীত নাগ।
রঘুনাথপুরের ‘জঙ্গলসুন্দরী’ কর্মনগরীতে ধাপে ধাপে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রথম ধাপ হিসাবে মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরের শিমুলিয়ার ব্যাটারি ময়দানের প্রশাসনিক জনসভা থেকে ওই কর্মনগরীতে গড়ে ওঠা শ্যাম স্টিলের সুসংহত ইস্পাত প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘‘এখানে এত শিল্প হচ্ছে। আগামী দিনে পুরুলিয়া অন্য জেলার লোকদের চাকরি দেবে।” এ দিন জয়পুর ব্লকের আঘরপুরের বির্তকিত শিল্পতালুকের উদ্বোধন করেন তিনি। জানান, কাশীপুর ব্লকেও গড়া হচ্ছে শিল্পতালুক।
বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য বাজেটে ওই কর্মনগরীর পরিকাঠামো উন্নয়নে একশো কোটি বরাদ্দ হয়েছিল। পরে ওই কর্মনগরীতে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েতের লছমনপুর গ্রামের অদূরে ছ’শো একর জমি রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের কাছ থেকে নেন শ্যাম স্টিল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার বিপুল পাণিগ্রাহী বলেন, ‘‘ছ’শো একর জমিতে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সুসংহত ইস্পাত প্রকল্প গড়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে বিনিয়োগ হয়েছে দেড় হাজার কোটি। কারখানায় পাঁচ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে।” এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, “প্রায় ছ’শো একর জমি আমরা দিয়েছিলাম। অতি অল্প সময়ে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন হল।”
সূত্রের খবর, ওই কর্মনগরীতে রঘুনাথপুর ১ ব্লকে আরও একটি ইস্পাত প্রকল্প গড়ছে অন্য এক বেসরকারি সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেড়শো একর জমিতে আরও একটি স্টিল প্ল্যান্ট হচ্ছে। বিনিয়োগ হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।”
লোকসভা নির্বাচনের আগেই ওই কর্মনগরীতে প্রকল্পের উদ্বোধন করে জেলার শিল্পায়নে রাজ্য কতটা ইতিবাচক, মুখ্যমন্ত্রী সেই বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের। তৃণমূলের দাবি, বাম আমলে ওই এলাকায় সুসংহত ইস্পাত প্রকল্প গড়তে জমি নিয়েছিলেন শ্যাম স্টিল কর্তৃপক্ষ। পরে তা রাজ্যকে ফিরিয়ে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী ‘জঙ্গলসুন্দরী’ কর্মনগরীর ঘোষণার পরেই বিনিয়োগে ফের আগ্রহী হয় সংস্থাটি। রঘুনাথপুরে শ্যাম স্টিলের প্রকল্পে থাকা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “এই উদ্যোগে বাংলার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। সেটাই রাজ্যের মূল লক্ষ্য। জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরীতে আড়াই হাজার একর জমি রাজ্যের হাতে আছে। আছে রাস্তা ও রেল যোগাযোগের সুবিধা। ইতিমধ্যে অনেক সংস্থাই এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।”
পুরুলিয়ার সভামঞ্চ থেকে ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড় শিল্পতালুকের একটি বেসরকারি পলিফিল্মস কারখানারও এ দিন উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রথম পলিফিল্মস কারখানাটি তৈরি হয়েছে। স্থায়ী ও ঠিকাশ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জনের কর্মসংস্থান হবে। এ দিন থেকে শুরু হয়েছে উৎপাদনও। কারখানায় অনুষ্ঠানে ছিলেন পঞ্চায়েত ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পন্নামবলম এস প্রমুখ।