সংঘর্ষ থামাতে বন্দুক উঁচিয়ে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল বীরভূমের পাড়ুই। সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিমুলিয়া গ্রামে দফায় দফায় চলল বোমা-গুলি। আগুন লাগানো হল দু’টি বাড়িতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে শূন্যে গুলি চালাতে দেখা যায়। গ্রেফতার মোট ১০ জন। ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর।
লোকসভা ভোটের পর থেকেই দু’দলের সংঘর্ষে তপ্ত হয়েছে বীরভূমের বিভিন্ন এলাকা। পাড়ুইও তার ব্যতিক্রম নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় সাত্তোরের দেবগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে বিজেপির কিছু কর্মী বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, বহিরাগত তৃণমূলের কিছু দুষ্কৃতী সেই সময় বিজেপি কর্মী শেখ সবুর ও রঞ্জিত ডোমের উপরে হামলা চালায়। এর পরে শিমুলিয়া গ্রামে থাকা
সবুরের বাড়িতে কিছু দুষ্কৃতী আগুন লাগিয়ে দেয়। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, শনিবার রাতে তৃণমূল কর্মী শেখ মিলনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বিজেপি-র লোকজন। রাতেই দমকলকর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পাড়ুই থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার সকাল থেকে আবার তেতে ওঠে পাড়ুইয়ের শিমুলিয়া, পলশা, ভেড়ামারি, বেলুটিয়া গ্রাম। এ দিন সকাল থেকে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ে। সঙ্গে ছিল মাস্কেট বাহিনীর দাপট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বোলপুরের এসডিপিও অভিষেক রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। এ দিন শিমুলিয়া গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেল, পুলিশে ছয়লাপ এলাকা। ধানের জমিতে তখনও চলছে বোমাবাজি। মাস্কেট হাতে দুষ্কৃতী বাহিনীকে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। কিছু পরেই পুলিশ তাড়া করে দুষ্কৃতীদের। দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শূন্যে গুলি চালাতে হয়। যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত হতাহতের কোনও খবর নেই। শুরু হয় ধরপাকড়ও। ভয়ে গ্রামগুলি এক প্রকার পুরুষশূন্য হয়ে যায়। গ্রামের মহিলারা আতঙ্কে বাড়ির ভিতরে ঢুকেছিলেন।
তছনছ পাড়ুইয়ের শিমুলিয়া গ্রামের তৃণমূল কর্মী শেখ মিলনের বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র
নতুন করে আর যাতে অশান্তি না বাধে, তার জন্য গ্রামে বসানো হয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। এলাকায় চলছে পুলিশি টহলও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এ দিন গ্রামে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) শিবপ্রসাদ পাত্র। গ্রামগুলির বেশ কিছু রাস্তায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এই ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন তরফ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘শিমুলিয়া গ্রামের ঘটনায় আমরা দু’পক্ষের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং এসডিপিও। আমরা বিষয়টিকে তেমন বাড়তে দিইনি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’ কাঁদানে গ্যাসের শেল বা শূন্যে গুলি চালানো প্রসঙ্গে পুলিশ সুপারের মন্তব্য, ‘‘এই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (বোলপুর) কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই এ ব্যাপারে বলা যাবে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাত্তোর অঞ্চলের এক তৃণমূল নেতাকেও তারা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
শিমুলায়াতেই বাড়ি তৃণমূল কর্মী শেখ মিলনের। তাঁর বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। মিলনের মা রোজামা বিবি বলেন, ‘‘আমার ছেলে কিছুদিন হল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। সেই আক্রোশেই শনিবার রাতে বিজেপির কিছু কর্মী বাড়িতে চড়াও হয়ে আমাদের মারধর করে। বাড়ি থেকে বার করে দিয়ে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমরা দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।’’
বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের ভাড়াটে দুষ্কৃতীরা আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে। এলাকায় নতুন করে সন্ত্রাস শুরু করে ওরা বিজেপিকে দমন করতে চাইছে। তবে, তৃণমূল যত এই সব করবে, তত বেশি মানুষ বিজেপি-তে আস্থা রাখবেন।’’ পাল্টা তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহের দাবি, ‘‘এটা বিজেপি-রই চক্রান্ত। ২০১৪ সালেও একই ভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে পাড়ুইয়ের ওই গ্রামগুলিতে সন্ত্রাস চালিয়েছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। আবারও তারা পাড়ুইকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। পুরো বিষয়টি দেখার জন্য আমরা পুলিশকে বলেছি।’’