কাশীপুরে সিটুর প্রতিবাদসভা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
রেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আপাতত রাজ্যের ১৫টি রুটে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালাবে বেসরকারি সংস্থা। তালিকায় রয়েছে পুরুলিয়ার দু’টি রুট। একটি হাওড়া থেকে পুরুলিয়া হয়ে রাঁচী। অন্যটি আসানসোল থেকে পুরী। এই সিদ্ধান্তের কথা সামনে আসতেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। শুক্রবার কাশীপুরে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু প্রতিবাদ সভা করেছে। সরব হয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূলও। রেলকর্মীদের সংগঠন মেনস কংগ্রেসের নেতা সুব্রত দে ও মেনস ইউনিয়নের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘করোনা-পরিস্থিতিতে লকডাউনের সুযোগ নিয়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেনকেও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার।” তাঁরা জানান, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রেলকর্মীদের নিয়ে আন্দোলন হবে।
রেল সূত্রের খবর, সারা দেশে ১০৯টি স্টেশন থেকে ১৫১টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে চালাতে চাইছে রেলমন্ত্রক। ১ জুলাই এই বিষয়ে প্রাথমিক বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। এই রাজ্যের ১৫টি রুটে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তারই মধ্যে রয়েছে হাওড়া থেকে পুরুলিয়া হয়ে রাঁচী এবং আসানসোল থেকে আদ্রা, বাঁকুড়া, খড়্গপুর হয়ে পুরী। দু’টি রুটেই রোজ প্রচুর যাত্রী যাতায়াত করেন। বিশেষত, দক্ষিণ পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা ব্যবসা সংক্রান্ত দরকারে অনেকে ট্রেনে রাঁচী যাতায়াত করেন। রেলকর্মী সংগঠন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশঙ্কা, দু’টি ট্রেন বেসরকারি হাতে তুলে দিলে সাধারণ লোকজন নানা রকমের মুশকিলে পড়তে পারেন।
বেসরকারি সংস্থা মুনাফা করতে ট্রেনের ভাড়া বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নেপাল মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সরে আসছে। ক্ষতি হলেও মানুষকে পরিষেবা দেওয়া সরকারের ধর্ম। ট্রেন চলাচল অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার মধ্যেই পড়ে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় জানান, শুক্রবার কাশীপুরের কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বামফ্রন্টগত বটেই, কংগ্রেসকেও সঙ্গে নিয়ে জেলা জুড়ে আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।” তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘রেল ভারতের অর্থনীতির প্রাণস্পন্দন। তারও বেসরকারিকরণ হলে আর কী বাকি থাকল? আমরা আন্দোলনে নামছি।’’
অন্য দিকে, লাইন-সহ পুরো পরিকাঠামো রেলের। ট্রেন চালাবেন রেলের চালক এবং গার্ড। সে ক্ষেত্রে প্যাসেঞ্জার ট্রেন কেন বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়া হবে, সেই প্রশ্ন তুলছে রেলকর্মী সংগঠনগুলি। মেনস কংগ্রেসের নেতা সুব্রত দে বলেন, ‘‘পর্যায়ক্রমে পুরো রেলটাই বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পথে হাঁটছে বিজেপির সরকার। সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছি আমরা।”
মেনস ইউনিয়নের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার রেলের বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম থেকেই তার বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠন লড়াই
করে চলেছে।’’
তবে বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ মানুষের কোনও সমস্যা হবে না। বিরোধীরা অহেতুক অভিযোগ তুলে বাজার গরম করতে চাইছেন।”