আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সিউড়ির বেণীমাধব মোড়ে মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালানো হচ্ছে। বুধবার রাতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’-এর ডাকে সারা দিয়ে আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার রাতে জেলা জুড়ে মিছিল, জমায়েত করে মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালানোর কর্মসূচি পালন করল বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক মঞ্চ। ডাক্তারদের সঙ্গে প্রতিবাদে যোগ দিলেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। অনেক জায়গায় মধ্যরাত পার করে প্রতিবাদ চলল। সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাটের মতো শহরের পাশাপাশি এই প্রতিবাদে জুড়ে গেল দুবরাজপুর, মুরারইও।
জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা ‘বিচার পেতে আলোর পথে’ কর্মসূচিতে শামিল হয়ে এ দিন সিউড়ি শহরে তিনটি বড় মিছিল আয়োজিত হয়। সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা একটি মিছিলের আয়োজন করেন। শহরের নাগরিক সমাজের ডাকা একটি মিছিল সিউড়ির বেণীমাধব মাঠ থেকে শুরু হয়ে সিউড়ি সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মিছিলের সঙ্গে যোগ দেয়। জেলার মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ সংগঠনের পক্ষ থেকেও সিউড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে একটি মিছিল আয়োজন করা হয়। সেই মিছিলও শহর পরিক্রমা করে পৌঁছয় সিউড়ি সদর হাসপাতালের সামনে। সেখান থেকে মিছিলগুলি একত্রিত হয়ে সিউড়ি বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছয়। সিউড়ি সদর হাসপাতালের ভিতরে এবং শহরের আরও কয়েকটি জায়গায় মোমবাতি জ্বালিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানান শহরের আন্দোলনকারীরা। এর আগে এ দিন বিকেলে সিউড়ির সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও প্রাক্তনীদের তরফ থেকে আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে সুবিচারের দাবি তুলে তিলপাড়া থেকে মসজিদ মোড় পর্যন্ত এই প্রতিবাদ মিছিল হয়।
মোমবাতি ও মশাল হাতে মিছিলের কর্মসূচি পালন করা হয় বোলপুরেও। এ দিন ‘রাতের রাস্তায় জনতার আদালত’ নামে শহরের দু’প্রান্ত থেকে দু’টি মিছিল এসে মিলিত হয় বোলপুর সুপার মার্কেট সংলগ্ন বকুলতলায়। এক দিকে, বোলপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে একটি মিছিল চৌরাস্তা হয়ে বকুলতলায় এসে পৌঁছয়। অন্য দিকে, শান্তিনিকেতনের রতনপল্লির মাঠ থেকে অন্য একটি মিছিল বিশ্বভারতী চত্বর পরিক্রমা করে এসে পৌঁছয় বকুলতলায়। দু’মিছিলের সদস্যেরা বকুলতলায় এসে মোমবাতি জ্বালান। গান, নাচ, আবৃত্তি, পথ নাটিকার মাধ্যমে মধ্যরাত পার করে চলে আন্দোলন কর্মসূচি। বোলপুরে প্রতিবাদে শামিল হয় একাধিক রাজনৈতিক দল। আয়োজকদের তরফে চিকিৎসক সীতারাম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের প্রত্যেকের মাথা হেঁট করে দিয়েছে। তাই সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আবারও এক সঙ্গে পথে নেমেছি। ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতেই আমাদের একত্রিত হওয়া।”
একই ভাবে রামপুরহাট শহরেও এ দিন একটি নাগরিক মিছিলের আয়োজন করা হয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট ছোট মিছিল এসে রামপুরহাট পাঁচমাথা মোড়ে মিলিচ হয়। সেখানে একটি বড় মিছিল মশাল হাতে শহর পরিক্রমা করে। রামপুরহাট শহরের বহু চিকিৎসক এবং রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তারেরা যোগ দিয়েছিলেন এই মিছিলে। মোমবাতি হাতেও মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন অনেকেই।
মুরারইয়েও এ দিন নাগরিক মঞ্চের তরফ থেকে চিকিৎসকদের আন্দোলনের সমর্থনে একটি মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করা হয়৷ মুরারই স্টেশন বাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে মোমবাতি হাতে শহর পরিক্রমা করেন আন্দোলনকারীরা।
দুবরাজপুর শহরের সমস্ত স্কুলের প্রাক্তনীরা মিলে একটি মহামিছিলের আয়োজন করেন। ‘দুবরাজপুর প্রাক্তনী প্রতিবাদী ন্যায় মঞ্চের’ তরফ থেকে আয়োজিত এই মিছিল শুরু হয় দুবরাজপুর সারদা ফুটবল ময়দান থেকে। সেখান থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে থানা মোড়ে এসে শেষ হয় এই মিছিল।