অভিযুক্ত কমলকুমার এবং সুষমা শর্মা।
রীতিমতো চুক্তপত্রে সইসাবুদ করেই শিশুপাচার হয়েছিল। বাঁকুড়ার শিশুপাচার-কাণ্ডে এ বার সেই চুক্তিপত্রই হাতে পেল সিআইডি। জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুষমা শর্মার স্বামী তথা শিশু পাচার-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত সতীশ ঠাকুরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই চুক্তিপত্র উদ্ধার হয়েছে। স্ট্যাম্প পেপারে লেখা ওই চুক্তিপত্রে কী লেখা রয়েছে, কত টাকার লেনদেন হয়েছিল, তদন্তে স্বার্থে তা এখনই খোলসা করতে নারাজ গোয়েন্দারা।
যদিও সতীশের আইনজীবী সোমনাথ রায়চৌধুরীর দাবি, কোনও আর্থিক লেনদেন হয়নি। এর পিছনে কোনও খারাপ উদ্দেশ্যও ছিল না তাঁর মক্কেলের। সোমনাথ বলেন, ‘‘চুক্তিপত্রে কোনও আর্থিক লেনদেন খুঁজে পায়নি সিআইডি। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। তাই পাঁচ শিশুকে সুষমা শর্মা ও সতীশ ঠাকুরের হাতে তুলে দেন তাদের মা রিয়া বাদ্যকর। সন্তানরা যাতে ভাল থাকেন, সেই আশাতেই নিজের বাচ্চাদের অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে কোনও খারাপ উদ্দেশ্য বা সন্তান কেনাবেচার যোগ নেই।’’
জুলাই মাসের মাঝামাঝি বাঁকুড়ার শিশু পাচার-কাণ্ড সামনে আসে। স্কুল লাগোয়া বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জাতীয় সড়কের উপর দুই শিশুকে জোর করে গাড়ি তোলার সময় স্থানীয়দের নজরে পড়েন জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কমলকুমার রাজোরিয়া। তা থেকেই শিশুপাচার-চক্রের হদিশ মেলে। জানা যায় স্কুলের শিক্ষিকা সুষমাদেবী, তাঁর স্বামী সতীশও এই চক্রে জড়িত। অভাবী মায়ের থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিন শিশুকে কেনেন তাঁরা। তার মধ্যে ৯ মাসের একটি শিশুও ছিল। সব মিলিয়ে পাঁচ শিশুকে পাচারের চক্রান্ত ছিল তাঁদের।
বিষয়টি জানাজানি হতেই দুর্গাপুর মেনগেট এলাকার বাসিন্দা রিয়া পাঁচ শিশুকেই নিজের সন্তান বলে দাবি করেন। অভাবের সংসারে বিপাকে পড়েই নিজের সন্তানদের বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু রিয়া আদৌ ওই পাঁচ শিশুর মা কি না, তা নিয়েও সন্দিহান গোয়েন্দারা। যদিও রিয়ার আইনজীবী রথীন দে বলেন, ‘‘রিয়াকে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সিআইডি-র। ডিএনএ পরীক্ষা করলেই মিটে যায়! ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানিয়েও আদালতে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন গোয়েন্দারা। রিয়াই উদ্ধার হওয়া পাঁচ সন্তানের মা। তার প্রমাণ পেতে অবিলম্বে ডিএনএ পরীক্ষা হওয়া দরকার।’’
তবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি গোয়েন্দারা। হেফাজতের সময়সীমা শেষ হওয়ায় শনিবারচার অভিযুক্তকে বাঁকুড়া জেলা আদালতে তোলেন তাঁরা। আগামী ২ অগস্ট পর্যন্ত তাঁদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।