মেলার মাঠে শিশুশ্রমিক। নিজস্ব চিত্র
শিশু শ্রম বন্ধে নজরদারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পৌষমেলায় হোটেলগুলোতে সামান্য পারিশ্রমিকে নাবালকদের বাসন ধুতে বা খাবার পরিবেশন করতে দেখা গেল বৃহস্পতিবারও। অথচ বুধবারই শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা পৌষমেলা পরিদর্শন করেন। শিশু সুরক্ষা দফতরের নির্দেশ মেনে মেলায় এবার শিশু শ্রমে নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। বেশ কিছু দোকানে শিশু শ্রম মুক্ত দোকান বলে বোর্ডও ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। মেলায় খোলা হয়েছে শিশু বান্ধব কর্নার। জেলা শিশু সুরক্ষা দফতরের তরফ থেকে মেলায় সারাক্ষণ প্রচার চালানো হচ্ছে মেলায় কোথাও শিশুদের দিয়ে কাজ করতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ওই শিশু বান্ধব কর্নারে খবর দিতে বলা হয়েছে। কমিশনের সদস্যরাও নজরদারি চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
মেলায় শালপট্টির পিছনে অসংখ্য খাবারের দোকান। মূলত সেখানেই শিশু শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গিয়েছে মেলা শুরুর দিন থেকে। বৃহস্পতিবারও সেখানকার একটি দোকানে ঝাড়খণ্ডের রানিশ্বরের বাসিন্দা বছর তেরোর একটি ছেলেকে বাসন ধুতে দেখা গেল। তার পাশের দোকানেই সমবয়সী একজন টেবিল পরিষ্কার করছিল। ইলামবাজারের জয়দেবের বাসিন্দা সেই ছেলেটি বা বর্ধমানের বাসিন্দা তার আরেক সঙ্গীর বক্তব্য, ‘‘অভাবের জন্যই তো কাজে আসা। সংসারে রোজগার করার কেউ নেই। ছোট ছোট ভাই-বোন আছে, মা আছে। কাজ না করলে কে আমাদের এমনি এমনি খাওয়াবে?’’ বছরভর বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয়। নাগরদোলা, জাদু বা মরণ কূপের খেলার সঙ্গে খাবারের দোকানগুলি ঘোরে এক মেলা থেকে অন্য মেলায়। পরিবার সংসার নিয়ে যেমন অনেকে এভাবে ঘুরে ঘুরে জীবিকা নির্বাহ করেন তেমনই অভাবের তাড়নায় ঘর ছেড়ে বারো-তেরো বছরের কিছু ছেলেও এই দোকানদারদের সঙ্গে মেলায় মেলায় ঘোরে। মেলা শেষে যে টাকা রোজগার হয় তা বাড়িতে পাঠিয়ে ফের অন্য মেলায় চলে যায়।
পৌষমেলায় খাবারের দোকানদার সকলেই একবাক্যে জানান, জেলা শিশু সুরক্ষা দফতরের তরফ থেকে মেলা শুরুর দিনই দোকানদারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই মেলায় কোনওভাবেই শিশুদের দিয়ে কোনও কাজ করানো যাবে না। তাই অনেকেই কাজের জন্য নিয়ে এসেও নাবালকদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কয়েকটি দোকানে এখনও যে নাবালকেরা কাজ করছে তা স্বীকার করেছেন দোকানদারেরাও। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘ওরা বেতন পেলেও আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে গিয়েছে। আমাদের সঙ্গেই থাকে, খায়। জল এনে দেয়, বাসন ধোয়। এখন থেকে কাজ শেখে। ওদের কাজ বন্ধ করে দিলে পরিবারগুলোর পেটে ভাত জুটবে কি করে সেটা কে দেখবে?’’
কিন্তু এসবের পরেও সরকারি নির্দেশ ও নজরদারি এড়িয়ে কি করে চলছে শিশু শ্রম! অবাক হয়েছেন বীরভূম জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘কী করে এটা সম্ভব? বিষয়টি অবিলম্বে দেখা
দরকার। এমনটা হলে সংশ্লিষ্ট দোকানদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’