কারুশিল্প কেন্দ্রের উদ্বোধনে মমতা। — নিজস্ব চিত্র।
অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতীর জমি-বিতর্কের আবহে বীরভূম সফরে এসে নাম না-করে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে আক্রমণের নিশানা বানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার বোলপুরে নামার কিছু পরেই শান্তিনিকেতনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বাড়িতে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী, জেলাশাসক সহ প্রশাসনিক কর্তারা। সেখানেই তিনি অমর্ত্যের হাতে ‘প্রতীচী’ বাড়ির জমির নথি, যা সরকারের রেকর্ডে আছে, তা তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘‘আপনাকে (অমর্ত্য) ওরা যেভাবে কথা বলছে, তাতে বাংলার কোনও মানুষই খুশি নয়। এটা অত্যন্ত খারাপ। আপনি এর জন্য মানসিক ভাবে ভেঙে পড়বেন না। যদি কেউ এ ধরনের কথা বলে, তিনি কি একটা অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারেন?’’ এর পরই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘উনি কি বিশ্বভারতীর উপাচার্য হওয়ার উপযুক্ত লোক! ওঁর সম্বন্ধে তো কিছু বলি না আমরা। আমরা কি ওঁর কেসটা বলি? বলি না তো!’ উনি আসলে গৈরিকীকরণ করতে গিয়ে খালি মাছির মতো ভনভন করছেন। আর প্রতিদিন উনি আদালতে যাচ্ছেন।’’
বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যে চিন্তিত, তা-ও এ দিন সংবাদমাধ্যমকে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বলব বিশ্বভারতী ভাল করে চলুক। ছাত্র-ছাত্রীদের কথায় কথায় সাসপেন্ড, শো-কজ, হুমকি না দিয়ে, পড়াশোনা বন্ধ না করে, এখানে শুধু গৈরিকীকরণের লেফট-রাইট প্যারেড না করে বিশ্বভারতী ভাল ভাবে চলুক, আমি এটা চাই। শান্তিনিকেতনকে আমি শ্রদ্ধা করি। শান্তির সঙ্গে প্রত্যেকের একটা সম্পর্ক আছে। সেটা মিলিত মেলার প্রয়াস হবে, নাকি সেটাকে থাবা বসিয়ে গ্রাস করা হবে, এটা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁদের স্মরণ করা উচিত।” মমতা জানান, তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকে আবেদন জানিয়ে বলবেন, এমন ‘যথেচ্ছাচারের’ মনোভাব বন্ধ হোক।
বিজেপি-কে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি করলেই সাত খুন মাফ, অন্যদের বেলায় বন্ধ ঝাপ। এরা বড় বড় কথা বলেছিল তাই আমি ছোট্ট একটা ছক্কা মেরে গেলাম। এর পরেও যদি মিথ্যা কথা বলে, তাই আমি বীরভূমে ৩-৪ দিন থাকছি। আমি চাই বীরভূমের শান্তি ফিরে আসুক, আমি চাই বিশ্বভারতী শান্তিতে থাকুক।’’ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে অনেক সময়েই স্থানীয় পুলিশকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এমনকী জেলাশাসককেও ডাকা হয় না। এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে যেন একটি আলাদা সীমানা তৈরি করা হয়েছে, যার সঙ্গে বাংলার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
আজ, মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের একাংশ তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন বলেও মমতা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করতে চাননি ।