GI

Chhau: ছৌ মুখোশে জিআই

চড়িদারই ছৌ শিল্পী গম্ভীর সিংহ মুড়া প্রথম ছৌ নৃত্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন। ১৯৮১ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ০৮:৩৫
Share:

চড়িদা গ্রামে চলছে ছৌ মুখোশ তৈরি। নিজস্ব চিত্র

কলকাতার রসগোল্লা, বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচার তালিকায় এ বার জুড়ল পুরুলিয়ার ছৌ-ও। স্থানমাহাত্ম্য বজায় রেখে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) স্বীকৃতি পেল বাঘমুন্ডির চড়িদা গ্রামের ছৌ মুখোশ। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে ছাড়পত্র মেলার পরেই রাজ্যের তথ্য প্রযুক্তি ও জৈব প্রযুক্তি দফতরের ব্যবস্থাপনায় চড়িদার ৩১ জন ছৌ মুখোশ শিল্পীর হাতে এই মর্মে শংসাপত্রও তুলে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

রাজ্য সরকারের তথ্য প্রযুক্তি ও জৈব প্রযুক্তি দফতরের বিজ্ঞানী পারমিতা সাহা বলেন, ‘‘কোনও বস্তুর জিআই স্বীকৃতি নির্ভর করে তার প্রাচীনত্ব, সেই সংক্রান্ত প্রামাণ্য তথ্য, যাঁরা বস্তুটি বানাচ্ছেন তাঁদের পূর্বসূরিরা প্রথম থেকে তা বানাতেন কিনা— এই সব। বস্তুটির জীবিকা অর্জনে কী ভূমিকা তা-ও দেখা হয়। সেই নিরিখেই চড়িদার মুখোশ জিআই তকমা পেয়েছে।’’

জেলাশাসক রজত নন্দার কথায়, ‘‘আজ পুরুলিয়ার আনন্দের দিন। পর্যটকেরা এখানে এসে মুখোশ কিনে নিয়ে যান। এই স্বীকৃতির ফলে মুখোশ শিল্পীদের বিক্রি আরও বাড়বে।’’

Advertisement

চড়িদারই ছৌ শিল্পী গম্ভীর সিংহ মুড়া প্রথম ছৌ নৃত্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন। ১৯৮১ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন তিনি। জেলার লোক গবেষক সুভাষ রায় জানালেন, গম্ভীর যখন ছৌ নাচ শুরু করেন তখনও বীররসের ছৌ নৃত্যে এখনকার মতো মুখোশের ব্যবহার ছিল না। তবে বাঘমুন্ডির রাজদরবারে অসুরের মুখোশ পরে গম্ভীর নেচেছেন, সেই তথ্য মিলেছে।

সুভাষ আরও জানালেন, অষ্টাদশ শতকের শেষে বাঘমুন্ডির রাজপরিবারই বর্ধমান থেকে সূত্রধর সম্প্রদায়কে প্রতিমা গড়তে নিয়ে এসেছিলেন। এই প্রতিমা শিল্পীরাই প্রথম ছৌয়ের মুখোশ বানান বলে মনে করা হয়। প্রথমে পাখির পালক দিয়ে মুখোশ তৈরি হত। ওজনেও ছিল ভারী। ক্রমে বিবর্তিত হয়েছে মুখোশ তার বর্তমান রূপ পেয়েছে। এখন কাগজ, মাটি ও কাপড়ের সংমিশ্রণে হালকা মুখোশ তৈরি হয়।

জেলা জনশিক্ষা প্রসার দফতরের আধিকারিক সুমন চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই স্বীকৃতি পেতে চড়িদার মুখোশ শিল্পীরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন। চড়িদার অন্য শিল্পীরা বা জেলার অন্য এলাকার আরও কিছু শিল্পীও পরম্পরাগত ভাবে ছৌ মুখোশ তৈরি করছেন। তাঁরাও জিআই তকমার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর ফলে কেন্দ্রের নির্দিষ্ট ওয়েসাইট থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষজন জানতে পারবেন এই মুখোশের কারিগর কারা। জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত এই শিল্পের মুখোশ তৈরির কারিগরদের এই তকমা পাওয়া যে দরকার তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপলব্ধি করেছিলেন।’’

জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই শিল্পীরা এ বার থেকে পণ্যের মোড়কে জিআই তকমা ব্যবহার করতে পারবেন। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, ‘‘পর্যটকেরা অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে এসে গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই এ বার থেকে মুখোশ কিনবেন।’’

স্বীকৃতিতে খুশি চড়িদার শিল্পীরাও। গ্রামের প্রবীণ মুখোশ শিল্পী নেপাল সূত্রধর বা বর্তমান প্রজন্মের শিল্পী ত্রিগুনি সুত্রধর, জগদীশ সূত্রধর, কাবেরী দত্ত, ভীম সূত্রধররা বলছেন, ‘‘কে, কবে প্রথম মুখোশ তৈরি করেছিলেন, সেই ইতিহাস আমাদের জানা নেই। তবে গম্ভীর সিংহ মুড়ার সৌজন্যে চড়িদার পরিচিতি গড়ে উঠেছে। এই তকমা আমাদের পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করবে। জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement