কাজের নকশা ও মান নিয়ে উঠল প্রশ্ন

কাজের মধ্যেই ফের ভাঙল গার্ডওয়াল

আবার ভাঙল চেকড্যামের গার্ডওয়াল। এ বারও ঘটনাস্থল বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েত। সম্প্রতি ঘাটবেড়া গ্রামের অদূরে কুমারী নদীর উপরে নির্মীয়মাণ একটি চেকড্যামের গার্ডওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বলরামপুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৭
Share:

ঘাটবেড়া গ্রামের অদূরে কুমারী নদীর উপরে নির্মীয়মাণ চেকড্যামের গার্ডওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়েছে। শুরু হয়েছে সংস্কার। —নিজস্ব চিত্র

আবার ভাঙল চেকড্যামের গার্ডওয়াল। এ বারও ঘটনাস্থল বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েত।

Advertisement

সম্প্রতি ঘাটবেড়া গ্রামের অদূরে কুমারী নদীর উপরে নির্মীয়মাণ একটি চেকড্যামের গার্ডওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়েছে। এর কয়েকদিন আগে একই ভাবে ভেঙে পড়েছে যমুনা জোড়ের উপরে সেরেংহাতু গ্রামের চেকড্যামের গার্ডওয়ালের একাংশ। একই পঞ্চায়েত এলাকায় পরপর দু’টি চেকড্যামের গার্ডওয়াল ভেঙে পড়ায় নকশায় গলদ ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে নির্মাণকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ত দফতর অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ।

রুখা জেলা পুরুলিয়াতে সেচের সার্বিক উন্নয়নে জলতীর্থ প্রকল্পে এই জেলার ১৭টি ব্লকে চেকড্যাম তৈরি করছে রাজ্য সরকার। বস্তুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জল ধরো-জল ভরো প্রকল্পের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই জলতীর্থ প্রকল্পে পুরুলিয়াতে ২৫৫টি চেকড্যাম তৈরি করছে জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতর। বরাদ্দ হয়েছে ২৫৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। গত বছর ডিসেম্বর মাসে বান্দোয়ানে প্রশাসনিক জনসভায় চেকড্যামগুলি নির্মাণের শিলান্যাস করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। চলতি বছরের বর্ষায় যাতে এই জলাধারগুলিতে বৃষ্টির জল ধরে রাখা যায় সেই বিষয়ে জেলাপ্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব বুঝে চেকড্যামগুলির নির্মাণ কাজ ফেলে না রেখে দ্রুত কাজে নামে প্রশাসন।

Advertisement

কিন্তু বর্ষার গোড়াতেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে বলরামপুরে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়েছে দু’টি চেকড্যামের গার্ডওয়াল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কুমারী নদীর উপরে নির্মীয়মাণ চেকড্যামের গার্ডওয়ালের প্রায় ৩৫ ফুট ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা বৃন্দাবন মাছুয়ার, ঘাটু মাঝি, কৃত্তিবাস সিং সর্দারদের অভিযোগ, ‘‘নকশায় গলদ ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার জন্যই গার্ডওয়ালগুলি ভাঙছে। সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার।”

ঘটনা হল জঙ্গলমহল এলাকার মধ্যে বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েতে এলাকায় এই পাহাড়ি নদীগুলিতে বছরের অন্য সময়ে সে ভাবে জল না থাকলেও বর্ষাতে নদীতে বেশ বেগে স্রোত বয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখনও তো এলাকায় সেই রকম ভারী বৃষ্টিই হয়নি। নদীতে যে তীব্র স্রোত দেখা দেয়, তাও এ বার আসেনি। সামান্য বৃষ্টিতেই যদি গার্ডওয়ালগুলির এই পরিণতি হয়, তবে বড়মাপের বৃষ্টিতে পাহাড়ি নদী ও জোড়গুলির উপরে তৈরি চেকড্যামগুলির গার্ডওয়াল টিকবে তো?

সেরেংহাতুর পরে কুমারী নদীর উপরে গার্ডওয়ালটি ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে তাঁরা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বলরামপুরের বিডিও পৌষালী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে গার্ডওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।”

জেলার চেকড্যামগুলি নির্মাণের কাজ করছে কৃষি-সেচ দফতর ও পূর্ত দফতর। বলরামপুরের এই দু’টি চেকড্যামের নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে পূর্ত দফতর। তবে নকশায় গলদ বা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ মানতে চায়নি তারা। তাহলে কেন ভাঙল গার্ডওয়াল? দফতরের একাধিক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, কুমারী নদীর উপরে যেখানে চেকড্যাম তৈরি হচ্ছে সেখানেই মিশেছে একটি উপনদী। বৃষ্টিতে সেই উপনদীর জল বাড়ার পরে গার্ডওয়ালের একাংশে বড়মাপের ফাটল ধরেছে দেখে গার্ডওয়াল ভেঙে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বলরামপুরের কুমারী নদীর উপরে নির্মীয়মাণ গার্ডওয়ালের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা দেখেই ওই অংশ ভেঙে নতুন করে নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement