জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে পাগলা নদীর উপরে থাকা এই চেকড্যাম। —নিজস্ব চিত্র
মাত্র দু’বছর আগে তৈরি হওয়া চেকড্যাম জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে। কালভার্ট ভেঙে রাস্তার অর্ধেক অংশ দিয়ে এলাকার মানুষ কোনও রকমে যাতায়াত করছে। নিজেদের খরচায় তৈরি করা নৌকার ভরসায় নদী পারাপার করতে হচ্ছে। নদী ক্রমশ গ্রাস করে চলেছে গ্রামের ভিটে মাটি। ভাঙনের কবলে হারিয়ে যাচ্ছে মৃত স্বজনদের কবরস্থানের চিহ্নও। এ ভাবেই দুর্ভোগ ক্রমশ বেড়ে চলেছে মুরারই থানার দুই পিছিয়ে পড়া গ্রাম খুঁটকাইল এবং উত্তর রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতে নদীর দু’পাড় কংক্রিট দিয়ে বাঁধিয়ে নতুন সেতু পড়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন এলাকার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পাশ দিয়ে যাওয়া পাগলা নদী দু’টি গ্রামকে গোল করে ঘিরে চলে গিয়েছে লাগোয়া মুর্শিদাবাদে। অনেকটা ব-দ্বীপের মধ্যে অবস্থান করছে ওই দু’টি গ্রাম। খুঁটকাইল গ্রামে ২৫০টি এবং উত্তর রামচন্দ্রপুরে ৪০০টির বেশি পরিবারের বাস। গ্রামের সঙ্গে আশপাশের এলাকার যোগাযোগের জন্য পাগলা নদীর উপর সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। দাবি দু’পাড় বাঁধিয়ে দেওয়ারও। কিন্তু কোনও দাবিই পূরণ হয়নি। উল্টে বছর দুই আগে স্থানীয় আমডোল পঞ্চায়েত থেকে খুঁটকাইল গ্রামে নদীতে তৈরি হওয়া চেকড্যামটিও সাত দিন আগে ভেঙে পড়েছে। তাতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালেব, নুর আলমদের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত ঠিক করে ওই চেকড্যম তৈরি করেনি। যে ধরনের হিউম পাইপ বসানো উচিত ছিল, তা বসানো হয়নি। তাই নদীর জলের চাপে মাত্র দু’বছর আগে তৈরি হওয়া চেকড্যাম ভেঙে পড়েছে।”
বুধবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল খুঁটকাইল গ্রামে নৌকার ভরসায় বাসিন্দারা যাতায়াত করছেন। প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের চেকড্যামের ভাঙা অংশ নদীর জলের তলায়। নদী ক্রমশ গ্রাস করেছে কবরস্থানের অংশ। গ্রামের মসজিদ, প্রাথমিক স্কুলে কোনও গার্ডওয়াল নেই। যে কোনও দিন ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছেন সাদেমান শেখ, হাবিবুল শেখ, গিয়াসউদ্দিন শেখরা। তবু কেবলমাত্র খেতজমি, জন্মভূমির টানে কোনও রকমে সেই নদীর পাড়েই বেড়ার ঘর করে বাস করছেন। গ্রামের সম্পত শ্রেণির ছাত্রী চুমকি খাতুন, ফরিদা খাতুনদের আবার নৌকায় চেপে নদী পেরিয়ে দূরের হরিশপুর কাশিমডাঙা মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে পড়তে যেতে হচ্ছে। হাবিবুলরা আরও জানালেন, বছর দুয়েক আগে গ্রামের একটি বিয়েবাড়িতে অনুষ্ঠান চলাকালীন আগুন লাগে। কিন্তু সেতু না থাকা নদীপাড়ে গাড়ি রেখে আগুন নেভাতে হয়েছিল দমকল কর্মীদের।
দুর্দশার প্রায় একই ছবি উত্তর রামচন্দ্রপুরেও। গ্রামের বাসিন্দারাও নদী ভাঙনের জেরে ভিটেমাটি হারিয়েছেন। এক বছর আগে গ্রামের জুম্বা মসজিদ পাড়া থেকে ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের নদী পাড়ে ১০০ দিন প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ দফতরের উদ্যোগে প্রায় ৬৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাথর বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছিল। পরে সেই কাজ হঠাৎ-ই থমকে যায়। নদী পাড়ে ভাঙন কিন্তু অব্যাহত। কাজ বন্ধ কেন? সেচ দফতরের ময়ূরাক্ষী উত্তর শাখার নলহাটি বিভাগের সহকারী বাস্তুকার সুকান্ত দাসের বক্তব্য, ‘‘গ্রাম্য রাজনীতির কারণে ওই কাজে শ্রমিক পাওয়া যায়নি। তাই মাঝপথে কাজ থমকে গিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই কাজ করতে গেলে অনেক বেশি এলাকা জুড়ে করতে হবে।’’ সে ক্ষেত্রে নতুন করে প্রকল্প ব্যয় তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে বলে সুকান্তবাবু জানান।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের আলি রেজা দাবি করেন, ‘‘বাসিন্দাদের দাবি মেনে জেলা পরিষদের কাছে নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব একাধিক বার পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদ আজও তার অনুমোদন দেয়নি।’’ অন্য দিকে, নতুন চেকড্যাম কী করে ভেঙে পড়ল, তার সদুত্তর প্রশাসনের কাছ থেকে মেলেনি। তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের স্মৃতি কোনাই বলছেন, ‘‘ঘটনার সময় পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনা হয়েছিল। তাই ওই কাজ ঠিক করে দেখার সুযোগ পাইনি।’’ আর বিডিও কৃষ্ণকান্ত ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি তখন দায়িত্বে ছিলাম না। কেন ভাঙল খোঁজ নেব।’’