Internal Conflict among TMC

তৃণমূলের ‘কোন্দলে’ ভাঙচুর, বোমাবাজি

এলাকা সূত্রে খবর, এক সময় এলাকার দাপুটে নেতা ছিলেন আজম। বছর দেড়েক আগে স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে তাঁর প্রভাব কমে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৩
Share:

শেখ আজমের বাড়ির দেওয়ালে বোমার চিহ্ন। ভাঙচুরকরা হয়েছে কাচের জানালা।

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘাতে বেশ কয়েকটি বাড়িতে তাণ্ডব চালানো, ভাঙচুর, বোমাবাজির অভিযোগ উঠল দুবরাজপুরের যশপুর পঞ্চায়েতের খোয়াজ মহম্মদপুর গ্রামে। শুক্রবার সন্ধ্যার ঘটনা। অভিযোগের তির তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের দাবি, অশান্তির পিছনে রয়েছে অঞ্চল সভাপতি মুন্সি মোজাম্মেলের অনুগামীদের সঙ্গে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে পরিচিত শেখ আজমের ঘনিষ্ঠদের সংঘাত। অভিযোগ, বেছে বেছে হামলা হয়েছে আজম ও তাঁর আত্মীয়দের বাড়িতেই। শনিবার সন্ধ্যায় আজমের স্ত্রী পাখিজা বিবি, তাঁর স্বামীকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা ও হামলার লিখিত অভিযোগ করেছেন দুবরাজপুর থানায়। অভিযোগে নাম রয়েছে অঞ্চল সভাপতি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ শেখ সেলিম-সহ ১৪ জনের।

অঞ্চল সভাপতি অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি বা তৃণমূলের কোনও সংযোগ নেই। তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘এটা পারিবারিক ঝামেলা। দলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’’

Advertisement

গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে অন্তত একশো বোমা ফেটেছে। পাখিজার লিখিত অভিযোগের আগেই অবশ্য এলাকা অশান্ত করার ও বোমাবাজির জন্য স্বতঃপ্রণেোদিত মামলা রুজু করে শুক্রবার রাতে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় রয়েছে বিশাল বাহিনী। গোটা দশেক তাজা বোমা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। শনিবার বিকেলে সিআইডি বম্ব স্কোয়াড সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে। ওই এলাকায় এত বোমা কোথা থেকে এল, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে

এলাকা সূত্রে খবর, এক সময় এলাকার দাপুটে নেতা ছিলেন আজম। বছর দেড়েক আগে স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে তাঁর প্রভাব কমে। অঞ্চল সভাপতির সঙ্গে আজমের সম্পর্ক কখনওই মসৃণ ছিল না। সেই সংঘাত আরও বেড়েছে এক সময় আজমের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শেখ সেলিমের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পর থেকে। গ্রাম সূত্রেই জানা যাচ্ছে, সেলিমের মেয়ের সঙ্গে আজমের ছেলের বিয়ে হয়েছিল। তবে, বিয়ে টেকেনি। তার পর থেকে এলাকায় নানা কারণে দু’পক্ষের অশান্তি লেগেই আছে। সেলিম বর্তমাসে অঞ্চল সভাপতির গোষ্ঠীতে বলেই খবর।

শুক্রবার আজম-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর থেকে উত্তেজনা ছড়ায়। তবে, ঠিক কী কারণে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা পুলিশ খোলসা করেনি। দলের ক্ষমতাশীল গোষ্ঠীর চাপে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অভিযোগে দু’পক্ষের বাদানুবাদ হয়। তার পরেই হামলা হয় বলে আজম-গোষ্ঠীর দাবি।

শনিবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, আজমের বাড়িতে বোমাবাজি ও ভাঙচুর চালানোর চিহ্ন স্পষ্ট। ভাঙাচুর চালানো হয়েছে আজমের আত্মীয় শেখ ওয়েদুর, শেখ রমজান, শেখ আলি খান, শেখ নজরুল, শেখ মকিম সহ গোটা সাতেক বাড়িতে। ওয়েদুরের মোটরবাইকও ভাঙা হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে ঘরের কাচ, শৌচাগার। বাড়ির লোহার দরজায় বোমার চিহ্ন। ওয়েদুরের স্ত্রী সেবিনা বিবি বলেন, ‘‘যে তাণ্ডব হয়েছে, তাতে রাতের খাবারটুকুও খেতে পারিনি।’’

একই ছবি শেখ আলি খানের বাড়িতে। তাঁর ছেলে শেখ সুলতান প্রাক্তন বুথ সভাপতি। পুত্রবধূ প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য। ছোট ছেলে দুবরাজপুর থানার সিভিক ভালান্টিয়ার। আলি খান বলেন, ‘‘নীতিগত ভাবে আজমের পাশে থাকার জন্যই বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে সেলিমের লোকেরা। মহিলা- বাচ্চারা ভয়ে সিঁটিয়ে ছিল গোটা রাত।’’ আজমের দাবি, ‘‘আমি এখনও অঞ্চল কোর কমিটির অন্যতম সদস্য। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলি বলেই আমাকে রাস্তা থেকে সরাতে চায় ওরা। অঞ্চল সভাপতির উপস্থিতিতেই হামলা হয়েছে।’’

সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, আজমের অভিযোগ উড়িয়ে মুন্সি মোজাম্মেল হকের দাবি, ‘‘আজম এখন বুথ কমিটির সদস্যও নন। ভিত্তীহীন অভিযোগ করছেন। এই ঘটনার সঙ্গে দল বা রাজনীতির সম্পর্ক নেই। রাতের অন্ধকারে ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দোষীদের বের করুক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement