পুরুলিয়ার আড়শার বামুনডিহায় নিজস্ব চিত্র।
আট বছর আগে, ২০১৩-র ৯ জানুয়ারি পুরুলিয়ায় পারদ নেমেছিল ৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সোমবার পুরুলিয়া ফিরল সেই তাপমাত্রায়। এ দিন জেলায় সর্ব নিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাঁকুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও এক ধাক্কায় ৪ ডিগ্রি নেমে এ দিন থেমেছে ৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা (তথ্য) সুশান্ত দত্ত বলেন, ‘‘সর্ব নিম্ন তাপমাত্রা প্রায় প্রত্যেক দিনই রেকর্ড ভাঙছে। এ দিন সর্ব নিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আট বছর পরে জেলার সর্ব নিম্ন তাপমাত্রা এতটা নামল। উত্তুরে হিমেল বাতাস
ঢোকার কারণেই এমন হাড় কাঁপানো ঠান্ডা পড়ছে।’’
জেলায় রোজই নামছে পারদ। রবিবার সর্ব নিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩-র ৯ জানুয়ারি সর্ব নিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগে, ১৯৯২-র ১৬ ডিসেম্বর পারদস্তম্ভ নেমেছিল ৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
গত ১২ ডিসেম্বর থেকেই জেলায় শুরু হয় পারদ-পতন। এ দিন সকাল থেকে উত্তুরে হাওয়ার দাপটে কার্যত জবুথবু ছিল পুরুলিয়া। সকাল সাড়ে ৯টার আগে রাস্তাঘাটে তেমন কাউকে দেখা যায়নি। হাতে গোনা কয়েক জন যাত্রী ছিল বেশির ভাগ বাসে। রবি এবং সোমবার জেলার বেশ কিছু রুটের অনেক বাসই পথেই নামেনি।
‘পুরুলিয়া জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আচমকা এত ঠান্ডা পড়ে গিয়েছে যে, বেলা না বাড়লে ঘর থেকে কেউ বেরচ্ছেন না। সকালের প্রায় সব বাসই ফাঁকা ছুটেছে রবি ও সোমবার।’’ এই দু’দিন কয়েকটি রুটের বাস পথে নামেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সব রুট মিলিয়ে চারশোর বেশি বাস চলে। রবিবার কম-বেশি ৩১৫টি বাস রাস্তায় নেমেছিল। সোমবারও বেশ কিছু বাস নামেনি। সকাল ১০টার আগে, শহরের বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের দেখা মিলছে না। বিকেল হতেই স্ট্যান্ড ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।’’
শহর থেকে গ্রাম—টুপি, মাফলার, জ্যাকেট, সোয়েটার, চাদরে শরীর ঢেকেও কাঁপতে হয়েছে জেলাবাসীকে। সকালে শহরের ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের এক চা বিক্রেতার বক্তব্য, ‘‘উনুন থেকে তুলে ফুটন্ত চা ভাঁড়ে দিলেও লোকজন বলছেন, ঠান্ডা চা দিচ্ছি। ভাঁড়ে ঢালার সঙ্গে সঙ্গে জুড়িয়ে যাচ্ছে চা।’’
এ দিন বাঁকুড়াতেও সর্ব নিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে প্রায় ৪ ডিগ্রি। সোমবার ছিল জেলায় মরসুমের শীতলতম দিন। রবিবার সর্ব নিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন নেমে হয় ৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল থেকেই বাঁকুড়ার আকাশ ছিল মেঘমুক্ত। দিনভর কনকনে উত্তুরে হাওয়ার দাপট ছিল জেলা জুড়ে। চায়ের দোকানে হাজির অনেককেই উনুনে হাত সেঁকতে দেখা যায়। রাস্তার পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় বহু মানুষকে। বিকেল হতেই রাস্তা ফাঁকা হতে শুরু করে। বাঁকুড়ার বাসিন্দা শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সারা দিন শরীর থেকে শীতের পোশাক খোলাই যায়নি।” মঞ্জু কর্মকার নামে এক বধূর কথায়, “রান্নার ফাঁকে গ্যাস আভেনের তাপে হাতে সেঁকে নিচ্ছিলাম। বেশ ভাল লাগ ছিল।”
জেলার পর্যটনস্থলগুলির আশপাশের ব্যবসায়ীরা চাইছেন, ঠান্ডা স্থায়ী হোক অন্তত কয়েক সপ্তাহ। ছাতনার শুশুনিয়ার ব্যবসায়ী রমেশ হালদার, বাদল রক্ষিতরা বলেন, “করোনা-পরিস্থিতির জন্য পর্যটন ব্যবসা এক টানা মার খাচ্ছে। আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা শীতের মরসুমের উপরেই নির্ভরশীল। এ বার ভাল শীত পড়ছে। করোনাও কিছুটা কমেছে। নতুন বছরের শুরুর কয়েকটা সপ্তাহ পর্যন্ত এমন শীত থাকলে, আমাদের ব্যবসা ভাল হবে। কপালও ফিরবে।”