ফিতে দিয়ে মাপজোক। সাঁতুড়ির সুনুড়ি গ্রামে। ছবি: সঙ্গীত নাগ
একশো দিনের কাজ প্রকল্পের পরিদর্শনে আসা কেন্দ্রীয় দলের এক সদস্য সোজা নেমে গেলেন হাপায়। ফিতে আনিয়ে মেপে বোঝার চেষ্টা করলেন, কী পরিমাণ মাটি সেখানে কাটা হয়েছে। তার পরে, মাস্টার রোল-এ চোখ বুলিয়ে দেখে নিলেন, সেই পরিমাণ মাটি কাটার কথাই সেখানে উল্লেখ রয়েছে কিনা। সব দেখে জানালেন, ‘গাফিলতি’ পাওয়া যায়নি।
পরিদর্শনের এ হেন ছবি দেখে অবাক সাঁতুড়ি ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত বালিতোড়া পঞ্চায়েতের সুনুড়ি গ্রামের বাসিন্দারা।
বুধবার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পরিদর্শনে বালিতোড়ায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় দলের দুই সদস্য ডিসি রায় ও চন্দন সিংহ। বিজেপি পরিচালিত রামচন্দ্রপুর-কোটালডি পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজও পরিদর্শন করেন তাঁরা।
বেলা ১১টা নাগাদ বালিতোড়া পঞ্চায়েতে আসেন দুই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ব্লক প্রশাসনের অধিকারিকেরা। পঞ্চায়েত প্রধান কালীদাস সরকার এবং পঞ্চায়েতের অন্য কর্মীরা আগেই পঞ্চায়েতে হাজির ছিলেন। সকলকে নিয়ে আলোচনায় বসেন কেন্দ্রের কর্তারা। একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা, বার্ধক্য ভাতা-সহ অন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নেন তাঁরা।
বৈঠক শেষে আবাস প্রকল্প ও একশো দিনের কাজ পরিদর্শনে বেরোন দুই কর্তা। ডিসি রায় গিয়েছিলেন সুনুড়ি গ্রামে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে হাপা খোঁড়ার কাজ পরিদর্শনে। প্রদীপ ঝরিয়াতের জমিতে খোঁড়া হাপা দেখেন তিনি। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা সজল বাউড়ি তাঁর কাছে একশো দিনের কাজের মজুরি না পাওয়ার অভিযোগ জানান ।
সজল বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় চাষাবাদ কার্যত নেই। একশো দিনের কাজই রোজগারের প্রধান ভরসা। তা-ও বন্ধ হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। দেড় বছর হয়ে গেলেও কয়েক হাজার টাকা বকেয়া মজুরি মেলেনি।’’ এর পরে ডিসি রায় যান নবদ্বীপ মাজির জমিতে দু’লক্ষ টাকা ব্যয়ে খোঁড়া হাপা দেখতে।
কেন্দ্রীয় দলের সদস্যকে কাছে পেয়ে ভিড় জমান স্থানীয় শ্রমিকেরা। একশো দিনের কাজের বকেয়া মজুরি মেটানোর দাবি তোলেন তাঁরা। পরে আরও একটি হাপা পরিদর্শনে গিয়ে একই দাবি শুনতে হয় কেন্দ্রের ওই আধিকারিককে। স্থানীয় বাসিন্দা জবা বাউড়ি, নরেশ বাউড়িরা বলেন, ‘‘দেড় বছর ধরে একশো দিনের কাজের মজুরি বকেয়া রয়েছে। দোকানদারদের দেনা শোধ করতে পারছি না।’’
ডিসি রায় বলেন, ‘‘অনেকেই একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মজুরি পাননি বলে অভিযোগ। আমরা তাঁদের সমস্যা লিপিবদ্ধ করেছি। সংশ্লিষ্ট মহলে জানাব।’’
পঞ্চায়েতের এক কর্মীকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তৈরি বাড়িগুলির অবস্থা পরিদর্শন করেন অপর কেন্দ্রীয় আধিকারিক চন্দন সিংহ। উপভোক্তারা বাড়ি নির্মাণ সম্পন্ন করেছেন কিনা, বাড়ির সঙ্গে শৌচালয় তৈরি হয়েছে কিনা, জেনে নেন তিনি।