সুরজমণির সঙ্গে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
আবাস প্রকল্পের বাড়ি পেতে নেতাকে দিতে হয়েছে টাকা। শুক্রবার মানবাজার ২ ব্লকের আঁকরো-বড়কদম গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়কদম গ্রামে গিয়ে এমনই অভিযোগ শুনলেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। আবার একশো দিনের প্রকল্পে মজুরি বকেয়া রাখার অভিযোগে এই এলাকাতেই গ্রামবাসীর একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ও তাঁদের সঙ্গী জেলা আধিকারিকদের।
বৃহস্পতিবার বলরামপুর থেকে পরিদর্শন শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য শৈলেশ কুমার, নীলরতন মিত্র ও পুলকিত নারুলা। আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি দেওয়ার বিনিময়ে শাসকদলের নেতাদের একাংশ দুঃস্থ মানুষদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে।
এ দিন বড়কদম গ্রামে গিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের জন্য উপভোক্তা সুরজমণি হাঁসদাকে কাউকে টাকা দিতে হয়েছে কি না, জানতে চান। ওই যুবতী দাবি করেন, ‘‘ঘর তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়তেই তা থেকে ভাগ দিতে হয়েছে।’’ কেন্দ্রীয় দলের এক প্রতিনিধি জানতে চান, ‘‘কত টাকা দিয়েছেন?’’ যুবতী বলেন, ‘‘বলেছিল, ঘর করে দিচ্ছি, টাকা লাগবে। বারবার বাড়িতে আসত। ছয় হাজার টাকা চেয়েছিল। চার হাজার দিয়েছি। এক দিন ব্যাঙ্ক থেকে ঘর তৈরির টাকা তুলে আনছিলাম। রাস্তাতেই সেই টাকা দিতে হয়েছে।’’ কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা সেই ব্যক্তির নাম, পরিচয় জানতে চান। যুবতী জানান, যামিনী মাহাতো, তিনি পার্টিতে ঘোরেন। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা প্রৌঢ়ার সঙ্গে তাঁদের কথোপকথন রেকর্ড করে রাখেন।
স্থানীয় ভাবে জানা যায়, যামিনী সে সময়ে গ্রামের তৃণমূল নেতা ছিলেন। পরে যামিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘‘‘আগে আমি তৃণমূল করলেও এখন কোনও পার্টি করি না। সে জন্য ওই মহিলা কারও মদতে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। মোটেই তাঁর কাছে টাকা নিইনি।’’ মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের চন্দ্রশেখর দাস বলেন, ‘‘মানুষজন যখন অভিযোগ করছেন, তখন তা অবশ্যই খতিয়ে দেখব।’’
ওই গ্রামেরই মাহালিপাড়ায় একটির বাড়ির দেওয়ালে সদ্য ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প’ লেখা দেখে সেখানে ঢুকে পড়েন কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা। গৃহকর্তা গৌর মাহালির কাছে তাঁরা শৌচালয় তৈরি হয়েছে কি না জানতে চান। গৌর বলেন, ‘‘শৌচালয় পাইনি। মাঠে যাই।’’ জবাব শুনে অসন্তুষ্ট হয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা সঙ্গী জেলা ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন শৌচালয় দেওয়া হয়নি?’’ এক আধিকারিক ব্যাখ্যা দিলেও সন্তুষ্ট হননি তাঁরা। এক প্রতিনিধি উল্টে তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আবাস যোজনা প্রকল্পের গাইড লাইনটা জানেন তো? শৌচালয় নেই তবু বাড়ি তৈরি হয়েছে! তাড়াতাড়ি শৌচালয় দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’’
সেখান থেকে ফেরার পথে হরিয়ালমাড়ি গ্রামে এক বৃদ্ধার কাছ থেকে অভিযোগ মেলে তাঁর হাপা (ছোট জলাশয়) খোঁড়ার কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। যে শ্রমিকেরা কাজ করেছিলেন, তাঁরাও পুরো পারিশ্রমিক পাননি বলে অভিযোগ।
ওই গ্রামে পরিদর্শকদের দেখতে পেয়ে বেশ কিছু লোকজন তাঁদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমরা একশো দিনের কাজের বকেয়া মজুরি পাচ্ছি না কেন? সাত মাস আগে কাজ করেছি, আজও মজুরির টাকা পাইনি। আর কবে টাকা পাব?’’ এক জন বলেন, ‘‘এ বারে বৃষ্টি নেই বলে চাষও হয়নি। একশো দিনের মজুরিও বকেয়া। কী ভাবে চলবে আমাদের?’’ বিডিও (মানবাজার ২) গোলাম গওসল আজম তাঁদের জানান, দ্রুত পারিশ্রমিক দেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা শুনে শান্ত হন বাসিন্দারা।
এর আগে বারি পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামে যান পরিদর্শকেরা। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নির্মিত একটি কংক্রিটের রাস্তার গভীরতা ও চওড়া ফিতে দিয়ে মেপে দেখেন তাঁরা। বামুনটাঁড়ে একটি হাপার গভীরতাও লাঠি দিয়ে মেপে দেখেন তাঁরা। বিকেলে বড়গেড়িয়া-জামতোড়িয়া পঞ্চায়েতও পরিদর্শন করেন তাঁরা। তবে কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা কোনও মন্তব্য করেননি।