Lottery Ticket

কেষ্ট মানেননি কখনও, লটারি-তদন্তে সিবিআই

সিবিআই সূত্রের দাবি, বোলপুরে চিত্রা মোড়ের একটি লটারি দোকান থেকে ওই টিকিটটি কেনা হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে বুধবার তদন্তকারীরা বোলপুরের লটারি ব্যবসায়ী বাপি গঙ্গোপাধ্যায়কে তলব করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ ০৯:১০
Share:

বোলপুরের সেই লটারির দোকান। নিজস্ব চিত্র

কোটি টাকার লটারি বহু মানুষ জেতেন। চর্চা হয়, অনেক ক্ষেত্রে খবরও হয়। কিন্তু, এ বছর জানুয়ারিতে রাজ্যের এক জনপ্রিয় ও নামজাদা লটারি সংস্থার একটি ওয়েবসাইটে ১ কোটি টাকার লটারি বিজেতা হিসেবে যাঁর নাম ও ছবি দেখে অনেকে চমকে উঠেছিলেন, তিনি আর কেউ নন, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। যদিও লটারিতে জেতা নিয়ে হেঁয়ালি করেছেন। সরাসরি স্বীকার করেননি কখনও। ওই ঘটনার ১০ মাস পরে সেই লটারি-কাণ্ডের তদন্তে নেমেছে সিবিআই।

Advertisement

সিবিআই সূত্রের দাবি, বোলপুরে চিত্রা মোড়ের একটি লটারি দোকান থেকে ওই টিকিটটি কেনা হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে বুধবার তদন্তকারীরা বোলপুরের লটারি ব্যবসায়ী বাপি গঙ্গোপাধ্যায়কে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন নিজাম প্যালেসে। সূত্রের খবর, জানতে চাওয়া হচ্ছে, অনুব্রত নিজে গিয়ে সেই টিকিট কিনেছিলেন নাকি কারও মারফতে, তা জানতে চায় সিবিআই।গরু পাচারে মোটা অঙ্কের কালো টাকা এই লটারির মাধ্যমে সাদা করা হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

ওই লটারি দোকানে গিয়ে বুধবার দেখা গেল, মালিক নেই।কর্মচারীরা দোকান সামলাচ্ছেন। তাঁরা বললেন, ‘‘মালিক বাইরে আছেন। এর বেশি আমরা কিছু বলতে পারব না।’’ ওই লটারি ব্যবসায়ী বাপিকে এ দিন ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

Advertisement

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের বিরুদ্ধে লটারি দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পরেই ক’দিন আগে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অনুব্রতের দলেরই এক নেতার স্ত্রীর লটারিতকে জেতা কোটি টাকা জেতার টিকিটের ছবি। নলহাটি পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা নলহাটি শহর তৃণমূলের সভাপতি রাকেশ সিংহের (পিন্টু) স্ত্রী নীরু সিংহ লটারিতে এক কোটি টাকা জিতেছিলেন গত জুলাই মাসে। বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাকেশ। কিন্তু, চর্চা তাতে থামছে না।

এ বার খোদ তৃণমূলের জেলা সভাপতির লটারিতে কোটি টাকা ‘জেতা’ নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ায় শুভেন্দুর অভিযোগ নিয়ে আবার চর্চা শুরু হয়েছে জেলায়। কারণ, অনুব্রত মণ্ডলের নাম উল্লেখ করে শুভেন্দু দাবি করেছেন, বিষয়টি (লটারি জেতা) সম্পর্কে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের কটাক্ষ, পুরো দলটাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। তাই সঠিক তদন্ত হলে অনেক কিছুই বের হবে।’’ বিজেপি-র বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অষ্টম মণ্ডলের দাবি, ‘‘বোঝা যাচ্ছে অনুব্রত মণ্ডল তাঁর কালো টাকা সাদা করতে লটারি ব্যবহার করেছিলেন। তাই সিবিআইয়ের নজরে এ বার লটারিও উঠে এসেছে।’’

তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি তথা দলের মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘লটারিতে এ রকম টাকা প্রতিদিন বহু মানুষ পেয়ে থাকেন। আজ অনুব্রত মণ্ডল পেয়েছেন বলে এত কথা উঠছে। আর এ নিয়ে বিরোধীরাও মাঠে নেমে পড়েছে। কথায় কথায় সিবিআই-ইডিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, এতে কোনও ফল হবে না।’’

অন্য দিকে, অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বোলপুরের প্রোমোটার অতনু মজুমদারকেও এ দিন নিজাম প্যালেসে ডাকা হয় বলে সিবিআই সূত্রের খবর। ওই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে অনুব্রতের নামে-বেনামে টাকা কোথাও বিনিয়োগ করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা ঝালদা

ঝালদা পুরসভায় পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা সংক্রান্ত তলবিসভা ডাকা হল না বুধবারও। তবে তৃণমূলের বর্তমান পুরপ্রধান ও প্রাক্তন পুরপ্রধানের পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থেমে নেই।

ঝালদার বর্তমান পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগের তুলে এ বার ইডি ও সিবিআই তদন্তের দাবি তুললেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের অন্যতম সম্পাদক তথা ঝালদার প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার। তৃণমূল নেতৃত্ব যখন বার বার কেন্দ্রীয় ওই দুই তদন্ত সংস্থার বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন তুলছে, সে সময় দলেরই এক নেতার এমন দাবিতে শুধু ঝালদা নয়, শোরগোল পড়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলেও।

মঙ্গলবার ঝালদা পুরভবন চত্বরে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে প্রদীপ দাবি করেন, ‘‘সুরেশের আমলে গত ছ’মাসে যে সীমাহীন আর্থিক বেনিয়ম হয়েছে, তাতে ইডি কিংবা সিবিআইয়ের মতো সংস্থাই পারে যথাযথ তদন্ত করতে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘পুরসভায় শুধু কাটমানির খেলা চলছে। কিছু নেতা পুরপ্রধানের সঙ্গে ‘মান্থলি’তে বাঁধা।’’

যদিও সুরেশের দাবি, ‘‘পুরভোটে মানুষ যাঁকে (প্রদীপ) প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাঁর এই সমস্ত কথাবার্তার কোনও ভিত্তি নেই। আমিও চাই তদন্ত হোক। তবে হলে শুধু গত ছ’মাসের কেন? তাঁর (প্রদীপ) আমলে যে সমস্ত বেনিয়ম হয়েছে, সেটাও তদন্ত করে দেখা দরকার।’’

এ নিয়ে বিরোধীরা সুর চড়িয়েছেন। পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর কটাক্ষ, ‘‘ফাঁকা আওয়াজ তুলে লাভ নেই। প্রদীপ যদি ওই অভিযোগ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হন, কংগ্রেস তাঁর পাশে থাকবে।’’ বিজেপির ঝালদা শহর সভাপতি বিজয় ভগতের দাবি, ‘‘তৃণমূল এবং তাদের পরিচালিত ঝালদা পুরসভা যে আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে, সে কথা আমরা দীর্ঘদিন বলে আসছি। এখন তাদের নেতারাই তা স্বীকার করছেন। মানুষই এর বিচার করুক।’’

সে সব প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য না করে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘আগেই বলেছি এ ভাবে বাইরে না বলে তাঁর (প্রদীপ) কিছু বলার থাকলে দলের কাছে জানাতে পারেন। দল সব কিছুর উপরেই নজর রাখছে। তাঁকে সতর্ক করা হবে।’’

এ দিকে নিয়ম অনুযায়ী উপপুরপ্রধানের তলবিসভা ডাকার মেয়াদ আজ বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি তলবিসভা ডাকবেন, নাকি পুরপ্রধানের মতো এড়িয়ে যাবেন, এ নিয়ে জল্পনার শেষ নেই সাধারণ মানুষজনের মধ্যে।

অনাস্থা প্রস্তাবে সই থাকা কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা নিহত তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু। তাঁর কথায়, ‘‘পুরপ্রধানের তলবিসভা ডাকা উচিত ছিল। সেটা তিনি করেননি। অবিলম্বে উপপুরপ্রধানকে তলবিসভাডাকতে বলছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement