গ্যাস থেকে চাল, তেল-মশলা থেকে আনাজ— সবের দামই ঊর্ধ্বমুখী। তবুও ভরপেট দুপুরের খাবার মিলছে ২০ টাকায়। মানবাজার শহরে, মানবাজার-বান্দোয়ান রোডের পাশে ‘আমার বাগান আমার চেতনা পার্ক’-এর ভিতরের ক্যান্টিন তাই বহু খেটেখাওয়া মানুষের ‘পকেট-ফ্রেন্ডলি’ হয়ে উঠেছে। প্রথমে ১৫ টাকায় খাবার মিললেও, কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাত বদল হয়ে এখন ২০ টাকায় খাবার দেওয়া হচ্ছে। দেখতে দেখতে এই ক্যান্টিন বৃহস্পতিবার এক বছর পূর্ণ করল। বিডিও (মানবাজার ১) মোনাজকুমার পাহাড়ি বলেন, ‘‘ক্যান্টিনে সস্তায় খাবার দেওয়া হলেও মান ভাল। আমি একদিন খেয়ে দেখেছি। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই ক্যান্টিনের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান করা হবে।’’
একটা জলাশয়কে ঘিরে বছর তিনেক আগে প্রশাসন ‘আমার বাগান আমার চেতনা পার্ক’ গড়ে তোলে। জলাশয়ে বোটিং চালু হয়েছে। রয়েছে বাগান, ছোটদের মনোরঞ্জনের জন্য খেলাধুলোর নানা সামগ্রী, প্রাণিসম্পদ দফতরের বেশ কয়েকটি প্রকল্প। ১০ টাকার টিকিট কেটে রোজ বহু মানুষ পার্কে আসেন। ওই পার্কে আসা মানুষজন ও এলাকাবাসীকে কম টাকায় খাবার দেওয়ার জন্য গত বছর চালু হয় ক্যান্টিন। সেই ক্যান্টিন চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকা ক্যান্টিনে চা, স্ন্যাক্স, জলখাবার, আইনসক্রিম পাওয়া যায়। মধ্যাহ্নভোজে থাকে ভাত, ডাল ও একটা তরকারি। ২০ টাকায় সেই খাবার খেতে প্রতি দিন প্রায় ৭০ জন আসেন। তাঁদের মধ্যে টোটোচালক, শ্রমিক, পথচারীরা সংখ্যায় বেশি। টোটোচালক বিশ্বনাথ সিং, অম্বুজ বাউরি বলেন, ‘‘২০ টাকায় দুপুরের ভরপেট ভাত খাওয়া যায়। রোজ তাই এখানেই খাওয়াদাওয়া করি।’’
মূল্যবৃদ্ধির বাজারে কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে? স্বনির্ভর দলের তরফে দীনবন্ধু বাগড়ি বলেন, ‘‘আগে কয়েকজন দায়িত্ব নিলেও চালাতে পারেননি। তবে সস্তায় মানুষকে খাবার দেব, এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা কাজ করছি। ভাতের সঙ্গে ডাল, পাঁচমেশালি তরকারি দিচ্ছি। এ থেকে লাভ হয় না, উল্টে ঘাটতি হয়। ক্যান্টিন চালানোর জন্য পাঁচ জন রয়েছেন। তাঁদের জন্য মাসে কয়েক হাজার টাকা ব্যয় হয়। তবে অনেকে টিকিট কেটে পার্কে বেড়াতে আসেন। ক্যান্টিনে তাঁরা চা, কফি, আইসক্রিম, বিস্কুট, চকোলেট কেনেন। ও সব থেকে মধ্যহ্নভোজের ঘাটতি মেটাই। জোড়াতালি দিয়ে চললেও খেটেখাওয়া মানুষগুলোর পকেট বাঁচিয়ে খাওয়াতেপেরেও তৃপ্তি রয়েছে।’’