ছবি প্রতীকী
দিন কয়েক আগেই সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী পঞ্চায়েতের প্রধান গৌতম রায় কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখনও তিনি কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার মধ্যেই তৃণমূলের সিউড়ি ১ ব্লক সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহ শুক্রবার কোভিড আক্রান্ত হয়ে বোলপুর গ্লোকালে ভর্তি হয়েছেন। এ দিনই করোনা আক্রান্ত হয়েছে বোলপুরের আরএসপি প্রার্থী তপন হোড়ও। তিনি বাড়িতেই নিভৃতবাসে রয়েছেন। ফোনে তিনি জানালেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে। শরীর মোটেও ভাল নয়।
করোনা পরিস্থিতি এক কথায় ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে বীরভূম জেলায়। সাধারণ মানুষ তো বটেই আমলা, পুলিশকর্তা, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী থেকে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী— কেউই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। করোনকে উপেক্ষা করে ভোটপ্রচারে দিন কয়েক আগেও যে সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেপরোয়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এখন তাঁদের একাংশের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সেটা তৃণমূল কিংবা বিজেপি বলে আলাদা কিছু নয়। ভার্চুয়াল সভার নামেও এখন অনেকে ভয় পেতে শুরু করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আক্রান্তের একাংশের উপলব্ধি, ‘‘আগে তো বাঁচি! তার পরে দল।’’
জেলার সাধারণ মানুষের বড় অংশই বলছেন, বীরভূমে শেষ দফায় ভোট। ফলে, ভোটের নামে প্রায় দু’মাস ধরে জনসভা, মিছিল, মিটিং করে কী সর্বনাশ যে রাজনৈতিক দলগুলো করল, তা দিন কয়েকের মধ্যে আরও স্পষ্ট হবে।
পরিস্থিতি যে অত্যন্ত ভয়াবহ বীরভূম জুড়ে, সেটা মানছেন স্বাস্থ্য ও প্রশাসনের কর্তারও। তাঁরা জানাচ্ছেন, কর্মীরা তো বটেই, জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের অনেকই কোভিড আক্রান্ত। প্রতিদিনই কেউ না কেউ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। একই ছবি স্বাস্থ্য দফতরের। জানা গিয়েছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সের মতো প্রথম সারির করোন যোদ্ধারা কোভিড আক্রান্ত হলে তাঁদের জন্য বীরভূম স্বাস্থ্যজেলার সিএমওএইচ অফিসে ৩০ শয্যার একটি সেফ হোম আছে। তার সব ক’টি বেড ভর্তি। এই তথ্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, করোনার থাবা কতটা পড়েছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্যে। রোগী ভর্তি গ্লোকাল হাসপাতাল , নিরাময় সেফ হোমেও। সময় যত গড়াচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বলেই জানালেন এক স্বাস্থ্যকর্তা।
সমস্যা এখানেই শেষ নয়। এক দিকে যখন হুহু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, ঠিক তখনই প্রতিষেধকের অভাব দেখা দিয়েছে বীরভূমে। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুরুর দিকে করোনা প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়েছিল জেলা, মহকুমা ও ব্লক হাসপাতালগুলিতে। কিন্তু টিকাকরণে গতি আনতে সেগুলির সঙ্গে যোগ হয় প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জেলায় ছড়িয়ে থাকা শতাধিক উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এক এক দিনে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছিল ১২-১৪ হাজার জনকে। কিন্তু, গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রতিষেধক সরবরাহে ঘাটতি দেখা গিয়েছে। দিনে গড়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিমাণ কমে এসেছে তিন থেকে চার হাজারে।
সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহে সোমবার মাত্র ১৫ হাজার ডোজ প্রতিষেধক এসেছিল। ফলে, সেটা এক দিনেই খরচ হয়ে যাওয়ার কথা। এ ভাবে চলতে থাকলে টিকাকরণ চালিয়ে যাওয়াই সমস্যার হবে। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘শনিবার বীরভূমের জন্য ১২ হাজার কোভিশিল্ডের ডোজ এবং মাত্র ৯০০টি কোভ্যাক্সিনের ডোজ পাব। এই সামান্য পরিমাণ ভ্যাকসিন দিয়ে কী হবে, আমাদের জানা নেই।’’