ফাইল চিত্র।
নলহাটির পর এবার মুরারই ১ ও ২ ব্লকের চাতরা এবং রুদ্রনগর গ্রামে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে গুজবের জেরে উত্তেজনা সৃষ্টি হল। বৃহস্পতিবার রাতে চাতরায় গ্রামের মহিলাদের ইন্টারনেটের প্রশিক্ষণ দেন এমন একজনের বাড়িতে চড়াও হন স্থানীয় সিতাচর, হামিদপুর ও রনপুর গ্রামের মহিলারা। এলাকায় ‘ইন্টারনেট দিদি’ নামে পরিচিত রেজিনা বিবি
ইন্টারনেটের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নামে সিএএ এবং এনআরসি-র জন্য তথ্য সংগ্রহ করছেন এমন অভিযোগ করা হয়। ঘটনাস্থলে জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের কর্তারা পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
এ দিনই সকালে মুরারই ২ ব্লকের রুদ্রনগরে তনুজা বেগম নামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দায়িত্বে থাকা সঙ্ঘের এক মহিলা কাস্টমার সার্ভিস প্রোভাইডারের (সিএসপি) বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভ দেখান স্বনির্ভর গোষ্ঠীরই মহিলারা ও তাঁদের বাড়ির লোকজনেরা। ওই সিএসপি’র বাড়ির দরজায় লাথি মারা ও বাড়ি ঘেরাও করা হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। দিন কয়েক আগে নলহাটির কুমারসাণ্ডা ও বসন্ত গ্রামে একই গুজবে দুই মহিলা কর্মীর বাড়িতে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। বসন্ত গ্রামে অবরোধে পড়েন নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও জগদীশচন্দ্র বারুই। জনতার রোষের মুখে বাধ্য হয়ে এনআরসি নিয়ে কোনও কাজ হচ্ছে না বলেও বিজ্ঞপ্তি জারি করেন বিডিও।
এদিকে বৃহস্পতিবার রুদ্রনগরের ঘটনাতেও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলতে বাধ্য হলেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েতে এনআরসি নিয়ে কোনও কাজ হচ্ছে না। এনআরসির আতঙ্ক থেকেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। বিরোধীরা গ্রামের গরীব মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে অশান্ত করার চেষ্টা করছে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি পঞ্চায়েতে একটি করে সঙ্ঘ রয়েছে। তার অধীনে সেই পঞ্চায়েতের সমস্ত মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি আছে। সিএসপিদের কাজ স্বনির্ভর দল গঠন, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া, এছাড়া সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি এই সঙ্ঘের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সেই জন্য বিভিন্ন সময় গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করা হয়। সম্প্রতি একটি প্রকল্পের কাজ চলছে রুদ্রনগর গ্রামে। তার জন্য নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। কোনও ভাবে বোঝার ভুলে এনআরসি আতঙ্ক গ্রাস করে গোষ্ঠীর সদস্যদের। তাঁরা গ্রামের সিএসপি তনুজা বেগমের বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়ির দরজায় লাথি মারার পাশাপাশি বাড়ি ঘেরাও করে। বিক্ষোভের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে যান পঞ্চায়েত প্রধান। বিডিও অমিতাভ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এনআরসির আতঙ্ক রয়েছে। তবে আজ যা ঘটেছে সেই বিষয়টি তদন্ত করা হবে। শুক্রবার সকলকে নিয়ে বৈঠকে করব আমরা।’’
সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে জেলায়। আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড সংশোধনীর জন্য দিকে দিকে লম্বা লাইন পড়ছে। নাগরিকত্ব ঘিরে সেই আতঙ্ক থেকেই ছড়াচ্ছে নানা গুজব। তেমনই গুজবের জেরে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, গ্রামবাসীদের ভয় অমূলক। গ্রামীণ মহিলাদের আধুনিক ইন্টারনেট শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে দেশ জুড়ে ‘ইন্টারনেট সাথী’ প্রকল্প চালু হয়েছে। টাটা ট্রাস্টস ও গুগলের উদ্যোগে মহিলাদের জন্য এই ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রকল্প চালু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই প্রকল্পেরই অঙ্গ হিসেবেই কুমারসন্ডা বা চাতরার মহিলারা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের এলাকায় গিয়ে ১৫ থেকে ৪৫ বছরের সব মহিলাকে স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার পদ্ধতি শেখানো শুরু করেছিলেন।
জেলার ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর সতুনুকা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য সাথী কার্ড, মাইক্রো ফিনান্স-সহ অনেক সরকারি প্রকল্পের কাজ করেন সঙ্ঘের ও স্বনির্ভর দলের মহিলারা। এই মহিলাদের অনেক রকম তথ্য নথিভুক্তির কাজ করতে হয়। ফলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য নাম, ঠিকানা সহ একাধিক নথি সংগ্রহ করতে হয়। কেউ গুজব ছড়িয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।’’